ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ছয় গুণ গম আমদানি
নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব কিছুটা শিথিল হওয়ায় দেশের বাজারে বেড়েছে গমের চাহিদা। কিন্তু পণ্যটির দেশীয় উৎপাদন সীমিত। ফলে আমদানি বাড়িয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়েই রেকর্ড পরিমাণ গম আমদানি করা হয়েছে।
বন্দরসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গম আমদানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেড়েছে। বাড়তি চাহিদা থাকায় আমদানি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোমরা শুল্কস্টেশনের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এ বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭০৩ টন। আমদানীকৃত এসব গমের মূল্য ৮৯৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সূত্রটি আরো জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছিল ৫৮ হাজার ৩৩৯ টন, যার মূল্য ১৫৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। তবে গম আমদানিতে সরকারের কোনো রাজস্ব আসে না।
ভোমরা স্থলবন্দরের কৃষিপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহিন হোসেন জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩৫-৪০ ট্রাক গম আমদানি করছে তার প্রতিষ্ঠান, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পাঁচ-ছয় গুণ বেশি। গত বছর প্রতিদিন সাত-আট ট্রাক গম আমদানি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস থেকেই খাদ্যশস্যটির আমদানি বাড়তে শুরু করে। আমদানীকৃত এসব গম সাতক্ষীরা জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবররাহ করা হয়। দেশের বাজারে গমের চাহিদা বেশি থাকায় আমদানি বেড়েছে।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুন্দরবন এজেন্সির স্বত্বাধিকারী দিপংকর কুমার ঘোষ জানান, তার এজেন্টের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা গম আমদানি করে থাকেন। সম্প্রতি কৃষিপণ্যটির আমদানি বেড়েছে। তার প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ১৫-২০ ট্রাক গম আমদানি করছে।
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা বাজারের গম ভাঙানো মিল মুকন্দ ফ্লাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকন্দ কুমার মজুমদার জানান, তার মিলে সপ্তাহে ৮-১০ হাজার কেজি গমের চাহিদা রয়েছে। জেলায় উৎপাদিত গমে চাহিদা মেটে না। তাই ভোমরা বন্দর থেকে আমদানীকৃত গম সংগ্রহ করে মিলের চাহিদা মেটান। বর্তমানে ভোমরা বন্দরে গম পাইকারিতে প্রতি কেজি সাড়ে ২৭-২৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোমরা শুল্কস্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার আমীর মামুন জানান, কৃষিপণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে গম আমদানি হচ্ছে। গত অর্থবছরের তুলনায় পণ্যটির আমদানি কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে আমদানি বাড়লেও পণ্যটি থেকে সরকারের কোনো রাজস্ব আসে না।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় খুব সামান্য পরিমাণে গম উৎপাদন হয়। ফলে জেলার চাহিদা মেটানো হয় আমদানীকৃত গমে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র আড়াই হাজার টন। গত মৌসুমেও প্রায় একই পরিমাণ উৎপাদন হয় বলে জানান তিনি।