ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজার নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে
চলতি বছর শেষ হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ায় বাজারে স্বল্পমেয়াদি উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশে নতুন করে লকডাউনসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করায় পণ্যটির চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে বেশির ভাগ পণ্যের বাজারদর।
চলতি মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নভেম্বরে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক মূল্য দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। এর আগের মাসে ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল।
এফএও জানায়, ভোজ্যতেলের দাম কমার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে সয়াবিন ও সরিষা তেল। তবে এ সময় পাম অয়েলের দাম প্রায় অপরিবর্তিতই ছিল। নভেম্বরেও আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের বাজারদরে ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত ছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের প্রভাবে পণ্যটির চাহিদায় ভাটা পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও শীর্ষ সরবরাহকারী দেশগুলোয় উৎপাদন ঘাটতি বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী রাখতে সহায়তা করেছে।
এদিকে সয়াবিন ও সরিষা তেলের বৈশ্বিক দাম লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে। মূলত পণ্য দুটির চাহিদা ব্যাপকভাবে কমায় বাজারে প্রভাব পড়েছে। এছাড়া অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার নিম্নমুখী হয়ে পড়ার কারণেও ভোজ্যতেলের দাম কমেছে।
গত মাসে প্রকাশিত খাদ্যশস্যের বাজারবিষয়ক প্রতিবেদনে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল (আইজিসি) জানায়, এক মাসের ব্যবধানে সয়াবিনের বাজারদরে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। মূলত পণ্যটির অতিরিক্ত সরবরাহ এবং সয়াবিন তেলের দর পড়ে যাওয়ায় পণ্যটির বাজার চাপের মুখে পড়ে। এক্ষেত্রে কিছুটা ভারসাম্য করেছে ঊর্ধ্বমুখী রফতানি চাহিদা। ফলে দাম কমলেও তা নিয়ন্ত্রিত ছিল।
আইজিসি বলছে, শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে মোটামুটি বেশি দামেই সয়াবিন কেনাবেচা চলছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী রেকর্ড পরিমাণ ফলন হওয়ায় নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তেলবীজটির বাজার নিম্নমুখী চাপের মুখে পড়ে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বড় পরিসরে সয়াবিন উৎপাদন ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ব্রাজিলে আবাদ বৃদ্ধির প্রচারণা এতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। এদিকে ২০২১-২২ উৎপাদন মৌসুমে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক উৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বাভাস মিলেছে। এর মধ্যে পাম অয়েল, সূর্যমুখী, সয়াবিন ও সরিষার তেল উৎপাদন চার বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছার সম্ভাবনা দেখছেন পণ্যবাজার পর্যবেক্ষকরা।
অয়েল ওয়ার্ল্ডের প্রধান টমাস মিল্কে বলেন, দুই বছর ধরে শীর্ষ চার ভোজ্যতেলের উৎপাদন ঘাটতি চলছিল। এ কারণে বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম দীর্ঘ সময় ধরেই আকাশছোঁয়া। বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতেও প্রভাবকের ভূমিকা রাখছে এটি। তবে ২০২১-২২ উৎপাদন মৌসুমে শীর্ষ চার ভোজ্যতেল উৎপাদন সব মিলিয়ে ৬৩-৬৮ লাখ টন বাড়তে পারে।
গত মাসে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক দাম ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে বলে জানায় এফএও। এর মধ্য দিয়ে বাজারদর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে। সংস্থাটি জানায়, পাম অয়েল উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষ দেশ মালয়েশিয়া। চলতি বছর শ্রমিক সংকট দেশটিতে পাম অয়েল উৎপাদন ব্যাহত করে। উৎপাদনে ধারাবাহিক নিম্নমুখিতা ভোজ্যতেলের বিশ্ববাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অক্টোবর পর্যন্ত টানা চার মাস ধরে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে সয়াবিন, সূর্যমুখী ও সরিষা তেলের দামও। তবে ভোজ্যতেল উৎপাদন বৃদ্ধির খবরে পাম অয়েল ছাড়া অন্যান্য তেলের দাম কমতে শুরু করেছে।