ভিয়েতনামের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ভিয়েতনামের মোট  দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। সম্প্রতি দেশটির জেনারেল স্ট্যাটিসটিকস অফিস এ তথ্য প্রকাশ করেছে। মহামারীজনিত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামি পণ্য রফতানি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। পাশাপাশি দেশটির ভোক্তা ব্যয়ও বেড়েছে। খবর নিক্কেই এশিয়া।

বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ভিয়েতনামে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশে উন্নীত হয়। এর আগে মহামারীজনিত বিধিনিষেধের কারণে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ভিয়েতনামের জিডিপির হার ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কমেছিল। তবে বর্তমানে দেশীয় অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির মুখ দেখছে।

ভিয়েতনামের প্রধান রফতানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামি পণ্য রফতানি ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৫৯০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট রফতানি আয় বেড়েছে ২১ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিভিন্ন দেশ ভিয়েতনাম থেকে পণ্য আমদানি করে থাকে। ভিয়েতনামের মোট রফতানির ২০ শতাংশ পূরণ করে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। ভিয়েতনাম টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটির বস্ত্র ও পোশাকের রফতানি মূল্য রেকর্ড পরিমাণ দাঁড়ায়। এছাড়া সস্তা শ্রমের জন্য ভিয়েতনামের পরিচিতি রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে ভিয়েতনামের শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমে বাড়তে থাকায় কারখানা তৈরির জন্য বহু উৎপাদনকারী ভিয়েতনামকে বেছে নিচ্ছেন। কভিড পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চীনের বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাইয়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ফলে ভিয়েতনামের শিল্পোৎপাদন কারখানার ওপর নির্ভরশীল হয়ে যান উৎপাদনকারীরা।

মিজুহো রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিরোমাসা মাতসুরা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জের ধরে ভিয়েতনামের রফতানিমুখী অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে।

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে পরিষেবাসহ দেশটির খুচরা বিক্রির হার বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

ভিয়েতনামের জিডিপির ১০ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। গত দুই বছর কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে পর্যটন খাতে ভাটা দেখা দেয়। তবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমায় চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে প্রথমবারের মতো বিদেশী পর্যটকদের স্বাগত জানায় ভিয়েতনাম। দানাংয়ের এক স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা জানান, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শহরটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ।

এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়েছে। এতে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

এ বছর ভূরাজনৈতিক সংকটের ফলে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে ভিয়েতনামের মোট বাণিজ্যের ১ শতাংশেরও কম হয় রাশিয়ার সঙ্গে। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশটির জিডিপিতে প্রত্যক্ষভাবে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছরের জুনে দেশটির ভোক্তা মূল্যসূচক ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে পরিবহন খাতে ভোক্তা মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এতে  মূল্যস্ফীতির হার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।

চলতি বছর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় শহরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, এ প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *