ভারতের সর্বনিম্নে ইস্পাত রফতানি

গত বছর ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় জাপানকে টপকে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে ভারত। এ সময় থেকেই দেশটির কারখানাগুলোয় ইস্পাত উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে। গত মে মাসেও ভারতে পণ্যটির উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। তবে উৎপাদন বাড়লেও ভারতের ইস্পাত রফতানিতে বজায় রয়েছে মন্দা ভাব।

মে মাসে দেশটি থেকে শিল্প ধাতুটি রফতানি কমে প্রায় তিন লাখ টনের কাছাকাছি নেমে এসেছে। এর মধ্য দিয়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে ভারতের ইস্পাত রফতানি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়তির দিকে থাকার জের ধরে উৎপাদন বাড়লেও ভারত থেকে ইস্পাত রফতানি ক্রমে কমছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর ইকোনমিক টাইমস, রয়টার্স ও বিজনেস লাইন।

ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ ভারতে পণ্যটির সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৯২ লাখ টনে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। শুধু আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নয়, বরং গত এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে দেশটিতে ইস্পাত উৎপাদন চার লাখ টন বেড়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ভারতের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ৮৮ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল।

তবে উৎপাদন খাতে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকলেও ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাত রফতানিতে মন্দা দেখা গেছে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৩ লাখ ১৯ হাজার টন ইস্পাত রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ কম। এর মধ্য দিয়ে ২০১৬ সালের এপ্রিলের পর ভারত থেকে শিল্প ধাতুটির রফতানি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে।

ভারত থেকে রফতানি হওয়া ইস্পাতের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো। তবে গত বছর ভারত থেকে নেপালে সবচেয়ে বেশি ইস্পাত রফতানি হয়েছে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে ভারত থেকে নেপালে সাকল্যে ৬৩ হাজার টন ইস্পাত রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ কম। একই চিত্র দেখা গেছে ইউরোপের বাজারেও। গত মে মাসে ভারত থেকে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় শিল্প ধাতুটির রফতানি ৫৫ শতাংশ কমেছে। এ সময় ভারতীয় রফতানিকারকরা ইতালিতে ২৩ হাজার টন ইস্পাত রফতানি করেছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৫ শতাংশ কম।

একই সময়ে স্পেনে ভারতীয় ইস্পাত রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ শতাংশ কমে ১৩ হাজার টনে নেমে এসেছে। গত মে মাসে ভারতীয় রফতানিকারকরা বেলজিয়ামে ২৫ হাজার টন ইস্পাত রফতানি করেছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ কম। উল্লিখিত দেশগুলোয় রফতানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ভারতের সম্মিলিত ইস্পাত রফতানিতে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ১ এপ্রিল ভারতে নতুন অর্থবছর শুরু হয়। সে হিসাবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (এপ্রিল-মে) ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাত রফতানি কমেছে ৩০ শতাংশ।

দেশটির কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রণালয়ের এক নোটে বলা হয়েছে, ইস্পাতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ভারত ক্রমে আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। বিপরীতে দেশটি থেকে কমে আসছে শিল্প ধাতুটির রফতানি। মূলত ভারতজুড়ে বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প চলমান থাকায় দেশটিতে ইস্পাতের অভ্যন্তরীণ চাহিদায় চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে। এ কারণে উৎপাদন বাড়লেও ভারত থেকে ইস্পাত রফতানি কমতে শুরু করেছে। রফতানি বাজার ধরে রাখতে ও রফতানিতে উৎসাহ দিতে ইস্পাতের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে দেশটির সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *