ভারতের মুদ্রা রুপির দরপতন সর্বনিম্ন

বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের মুদ্রা রুপির দরপতন চলছেই। ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় মূল্য এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সোমবার ডলার-রুপির বিনিময়মূল্য দাঁড়ায় ৭৪ রুপি। ভারতের ইতিহাসে রুপির অবস্থা এখনই সবচেয়ে নাজুক। ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় মূল্য কখনোই এ পর্যায়ে ছিল না। খবর এনডিটিভি প্রফিট ও ইকোনমিক টাইমসের।

খবর অনুসারে, শনিবারও ডলারের মূল্য ৭৪ রুপি ছুঁয়েছিল। তবে সেদিন লেনদেনের শেষভাগে রুপির মূল্য কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। সোমবার প্রথমবারের মতো ডলার-রুপির লেনদেন সমাপ্ত হয় ৭৪ রুপির উপরে। এদিন ডলারের সমাপণী মূল্য দাঁড়ায় ৭৪ রুপি ৬ পয়সা।

চলতি বছর শক্তিশালী ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দাম ১৫ শতাংশের মতো কমে। যা বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে রুপির সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স।

চলতি বছরে ডলারের বিপরীতে রুপির প্রায় ১৭ শতাংশ দরপতন হয়েছে। টানা দর পতনে দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ এখন হুমকীর মুখে। রুপির আরও দরপতন হতে পারে এমন আশংকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশটির পুঁজিবাজার থেকে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।

শেয়ার বিক্রির চাপে প্রায় প্রতিদিনই দেশটির শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হচ্ছে। গত সপ্তাহে দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর পতন হয়েছে।

যদিও সোমবার বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। তবে সেটি কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা।

এদিকে রুপির দরপতন ঠেকাতে ভারত সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি তারা ভারতীয় কোম্পানির ইস্যু করা বন্ডে বিদেশি বিনিয়োগকে সহজ করে দিয়েছে। অন্যদিকে কিছু বিলাসী পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে, যাতে সেগুলোর আমদানি কমে।

জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি ও বিপুল বাণিজ্য ঘাটতির প্রেক্ষিতে ডলারের বিপরীতে মূল্য হারাচ্ছে ভারতীয় রুপি।

বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশ ভারতে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়, যার প্রায় পুরোটাই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয় দেশটিকে। বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যের উর্ধগতিতে দেশটির আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি কমাতে হয়েছে ভারতকে।

ইরানের তেল আমদানিতে দুই ধরনের সুবিধা পেত দেশটি। প্রথমত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধের শিকার ইরান আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে ভারতের কাছে তেল বিক্রি করত। এছাড়া তেল আমদানির মূল্যের একটি অংশ ডলারের পরিবর্তে রুপিতে পরিশোধ করতে পারত দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি কমাতে হওয়ায় ঘাটতিটুকু মেটাতে হয় অন্য দেশ থেকে তেল আমদানি করে। তাতে গুণতে হয় বাড়তি মূল্য, আবার দামও শোধ করতে হয় ডলারে। সব মিলিয়ে তেল আমদানির চাপে বাড়ছে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ডলার-রুপি বিনিময় মূল্যে।

অন্যদিকে রুপির দরপতন ও পুঁজিবাজারের মন্দার কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে। নিজ দেশে পুঁজি প্রত্যাহারের জন্য তারা ডলার কিনছে বলে বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গিয়ে এর দরও বাড়ছে। বিপরীতে দর হারাচ্ছে রুপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *