ব্রিকসভুক্ত দেশে বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার
বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে মেরুকরণ নতুন কিছু নয়। সমস্বার্থের দেশগুলোর মধ্যে জোটবদ্ধতার মাত্রাও এখন আগের চেয়ে বেশি। এসব জোটভুক্ত দেশগুলো পরস্পরকে সুবিধা দিতে তৈরি করেছে নিজস্ব নীতি কাঠামো। ১০টি দেশ নিয়ে গঠিত এমনই এক জোট ব্রিকস। পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে বৈশ্বিক পুঁজির বড় একটি অংশের বিকাশ ঘটছে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোয়। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের হিসাব অনুযায়ী, এ জোটভুক্ত দেশগুলোর হাতে এখন পুঁজির পরিমাণ পুঞ্জীভূত হয়েছে ৪৫ ট্রিলিয়ন (লাখ কোটি) ডলারের সমপরিমাণ। খবর আরটি।
সম্প্রতি এ জোটের অর্থনৈতিক কাঠামোকে কেন্দ্র করে ব্রিকস ওয়েলথ রিপোর্ট শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে।
মূলত পশ্চিমা বলয়ের বাইরের বড় অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে ২০০৯ সালে ব্রিকসের যাত্রা। গত জানুয়ারিতে এ জোটে বড় ধরনের সম্প্রসারণ ঘটেছে। এতে যোগ দেয়া দেশগুলো হলো সৌদি আরব, ইরান, ইথিওপিয়া, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের বড় অর্থনীতির দুই দেশ সৌদি আরব ও ইইউর উপস্থিতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রতিবেদন অনুসারে, ব্রিকসভুক্ত এ ১০ দেশে বর্তমানে ১৬ লাখ সম্পদশালী রয়েছেন, যাদের বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের পরিমাণ ১০ লাখ ডলারের বেশি। এর মধ্যে ৪ হাজার ৭০০-এর বেশি মিলিয়নেয়ার ও সেন্টি-মিলিয়নেয়ারের হাতে রয়েছে গড়ে ১০ কোটি ডলার এবং ৫০০ জনের বেশি রয়েছেন বিলিয়নেয়ার বা ১০০ কোটি ডলার সম্পদের মালিক। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১০ বছরে এ অঞ্চলে মিলিয়নেয়ার বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৮৫ শতাংশ।
বৈশ্বিক জনসংখ্যা ও জিডিপির দিক থেকে ব্রিকস অঞ্চলের রয়েছে উল্লেখযোগ্য হিস্যা। এ অঞ্চলেই বসবাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ। বৈশ্বিক জিডিপির ৩৬ শতাংশই এসব দেশের, যা সম্পদশালী দেশগুলোর জোট জি-সেভেনের ৩০ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে।
ব্রিকসের সম্প্রসারণ বিষয়ে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের সিইও জুয়ের্গ স্টেফেন বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার (এমইএনএ) দেশগুলোর অন্তর্ভুক্তি শুধু রাজনৈতিক পুনর্গঠন নয়, বরং তাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মর্যাদার স্বীকৃতি। ঐতিহাসিকভাবে জ্বালানি সংস্থান ও বর্তমান বৈচিত্র্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকার জন্য অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরো জানান, ব্রিকসে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এ অঞ্চলের বাইরের বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। এতে ভূমিকা রাখছে দ্রুতবর্ধনশীল ভোক্তা বাজার, কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান এবং অনন্য সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক পরিবেশ।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, চীনে বর্তমানে ৮ লাখ ৬২ হাজার ৪০০ মিলিয়নেয়ার রয়েছেন। ভারতে এ সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ জন। ব্যক্তিগত সম্পদের পাশাপাশি মাথাপিছু সম্পদ বৃদ্ধির পূর্বাভাসে ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে ভারত।
২০৩৩ সালের মধ্যে দেশটির মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ১১০ শতাংশ বাড়তে পারে। এছাড়া চীনে আগামী ১০ বছরে ৮৫ শতাংশ হারে সম্পদের পরিমাণ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইথিওপিয়াও গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য হারে ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি দেখেছে। তাদের মিলিয়নেয়ার জনসংখ্যা যথাক্রমে ৩৫, ৭৭ ও ৩০ শতাংশ হারে বেড়েছে।
গবেষণা বলছে, আগামী ১০ বছরে সৌদি আরবের মাথাপিছু সম্পদ ১০৫ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। ৯৫ শতাংশের পূর্বাভাস নিয়ে এর পরের অবস্থানে রয়েছে ইউএই। এছাড়া চীন, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মিসর আগামী দশকে ৫০ শতাংশের বেশি সম্পদ বৃদ্ধি উপভোগ করবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী উচ্চ সুদহার, মূল্যস্ফীতি ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাসহ নানা অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের। বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণ কর্মসূচি জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশ দুটির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। ব্রিকসে তাদের উপস্থিতি নতুন একটি মাত্রা যোগ করেছে।
ব্রিকসের সম্পদশালী শীর্ষ ১০ শহরের তালিকাও প্রকাশ করেছে পার্টনার্স। সেখানে স্থান দখল করে নিয়েছে জোটের বড় অর্থনীতির দেশ চীনের পাঁচ শহর। সবচেয়ে ধনী শহরের তালিকার শীর্ষে আছে চীনের রাজধানী বেইজিং।
শহরটিতে ১ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ জন ধনকুবের আছেন। যাদের মধ্যে ৩৪৭ জন সেন্টি-মিলিয়নেয়ার (যাদের বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি ডলার বা তার বেশি) ও ৪২ জন বিলিয়নেয়ার। বেইজিংয়ের পর দ্বিতীয় স্থানে আছে সাংহাই। সেখানে সম্পদশালী ব্যক্তি রয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ জন। তিন নম্বরে থাকা দুবাইয়ে ধনকুবের রয়েছেন ৭২ হাজার ৫০০ জন। আছেন ২১২ জন সেন্টি-মিলিয়নেয়ার ও ১৫ জন বিলিয়নেয়ার।