ব্রাজিলে চিনি উৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বাভাস
আগামী বছর থেকে ব্রাজিলে চিনি উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশটির আখ উৎপাদকরা চিনি উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবেন। কারণ হিসেবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রকোপ দেখা দেয়ার পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করে। এর প্রভাবে কমে যায় বায়োডিজেলের দামও। ফলে ইথানলের পরিবর্তে চিনিকলগুলোয় আখ সরবরাহ করে বেশি মুনাফা পাচ্ছেন ব্রাজিলের কৃষকরা। এছাড়া বৈশ্বিক সংকটের কারণে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারেও চিনির দাম বেশি। বিষয়টিও আখ উৎপাদকদের সরবরাহ বাড়াতে আগ্রহী করে তুলছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসের বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য বলছে, ২০২০-২১ মৌসুমেও উৎপাদনের ধরন একই রকম ছিল। ওই সময় স্থানীয় বাজারে বায়োডিজেল হাইড্রাস ইথানলের তুলনায় চিনির দাম ছিল বেশি। প্রতি টন চিনি রফতানি করা হয়েছে ৫৫ ডলার ৬ সেন্টে।
গ্লোবাল প্ল্যাটস জানায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে চিনির বৈশ্বিক বিপণন মৌসুম শুরু হয়েছে। আগামী বছরের অক্টোবরে এ মৌসুম শেষ হবে। মৌসুমজুড়েই বাজার পরিস্থিতি চিনি উৎপাদনের অনুকূলে থাকবে। বিপরীতে কমতে পারে ইথানল উৎপাদন।
ব্রাজিল বিশ্বের শীর্ষ চিনি উৎপাদক দেশ। ভোগ্যপণ্যটির বৈশ্বিক বাজারে উত্থান-পতনের অনেকটাই নির্ভর করে দেশটির উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর। চলতি বছর ভয়াবহ খরা দেখা দিলে আখ উৎপাদনে ধস নামে। ফলে চিনি উৎপাদন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তার ওপর নতুন করে তুষারপাতের ধাক্কায় উৎপাদন প্রায় তলানিতে নেমে আসে। চিনির পরিবর্তে ইথানল উৎপাদনে আখ সরবরাহ বাড়াতে থাকেন দেশটির কৃষকরা।
তবে আগামী বছর থেকে ব্রাজিলে উৎপাদন পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকে মোড় নিতে পারে বলে মনে করছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস। উৎপাদনে আবারো প্রবৃদ্ধি দেখা দিতে পারে। এর পরও বৈশ্বিক ঘাটতির অবসান ঘটবে না। সংস্থাটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২১-২২ মৌসুমে চিনির বৈশ্বিক চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টনে। যদিও এ ঘাটতি ২০২০-২১ মৌসুমের তুলনায় কম। ওই সময় ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ১৯ হাজার টন। ২০২১-২২ মৌসুমে চিনির বৈশ্বিক উৎপাদন ৪৬ লাখ ৩৩ হাজার টন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১৮ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার টনে। থাইল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর উৎপাদনে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বেগবান হওয়ায় প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বৈশ্বিক উৎপাদনে এমন প্রবৃদ্ধি আসবে।
তবে এটি চিনির বৈশ্বিক বাজারে ভারসাম্য আনার জন্য যথেষ্ট নয়। কভিড-১৯-এর প্রভাবে বিপর্যস্ত দুই বছর শেষে সব ধরনের নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও চিনির বৈশ্বিক ব্যবহার ১ দশমিক ৩ শতাংশ করে বাড়তে পারে। ২০২১-২২ মৌসুমে ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮ কোটি ৪৮ লাখ ৬৫ হাজারে টনে, যা মোট উৎপাদনের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহার পাঁচ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছনোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এদিকে মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে পণ্যটির চাহিদায়ও ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার ঘটছে।
ব্রাজিলে সবচেয়ে বেশি চিনি উৎপাদন হয় দেশটির দক্ষিণ-মধ্য অঞ্চলে। আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে অঞ্চলটিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ পূর্বাভাস সত্য হলে ওই প্রান্তিকে আখ উৎপাদন ৭ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্লোবাল প্ল্যাটসের প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী বছর ব্রাজিলে সব মিলিয়ে ৫৫ কোটি টন আখ উৎপাদন হতে পারে। চলতি বছর উৎপাদনের প্রাক্কলিত পরিমাণ ৫২ কোটি টন। আগামী বছর উৎপাদিত আখ থেকে দেশটি ৩ কোটি ৩৭ লাখ টন চিনি উৎপাদন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে হিসাবে উৎপাদন ১৬ লাখ ৩০ হাজার টন বাড়তে পারে।