ব্যাংক ব্যবহারে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি

ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততায় এখনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি বাংলাদেশ।

রোবাবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশের এসডিজি অর্জন : ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

সেমিনারে উত্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কার ৮০ শতাংশের বেশি মানুষের ব্যাংক হিসাব আছে, সেখানে বাংলাদেশের মাত্র এক তৃতীয়াংশের একটু বেশি। ভারতে এর পরিমাণ ৫৩ শতাংশ।

আবার মালয়েশিয়ার প্রায় ৩১ শতাংশের বেতন হয় ব্যাংকে, বাংলাদেশের দুই শতাংশের কম। শ্রীলঙ্কার ৭ শতাংশের বেশি সরকারি-বেসরকারি কর্মীর বেতন পায় ব্যাংকের মাধ্যমে। একইভাবে ডেবিট কার্ড ব্যবহার, সঞ্চয়, আর্থিক অন্যান্য কার্যক্রমে ব্যাংকের সঙ্গে দেশের মানুষের সম্পৃক্ততা কম। তাই এসডিজি অর্জনে ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে আরও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (ডিএসবিএম) অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন সিদ্দিকী। গবেষণা দলে আরও ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এবং বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য আব্দুল কাইউম, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তানবীর মেহদী, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা রহমান, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক অন্তরা জেরিন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্মস অ্যাডভাইজর এস কে সুর চৌধুরী। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা,

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া, ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক মঈনুদ্দিন আহমেদ, এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। তিনি সেমিনারের বিষয়টির ওপর সূচনা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তিনি এসডিজি অর্জনে ব্যাংকিং খাতের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন।

সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্মস অ্যাডভাইজর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, এসডিজি তথা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচনায় স্কুল ব্যাংকিং, কৃষকের ১০ টাকার হিসাব এবং এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। এ সম্পৃক্ততা এসডিজি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প যাতে পর্যাপ্ত ঋণ পায় সেদিকেও নজর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, অর্থনীতিতে দুর্নীতির কারণে জিডিপির দুই শতাংশ ক্ষতি হয়। আর যানজটের কারণে ক্ষতি আরও দুই শতাংশ। এ দুটি বন্ধ হলে জিডিপি চার শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে ১১ শতাংশের বেশি। এদিক বিবেচনায় এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে দুর্নীতি এবং যানজট কমিয়ে আনতে হবে।

সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোর ঋণের ৮৫ শতাংশ ঢাকা এবং চট্টগ্রামে দেয়া হয়। এটি এসডিজি অর্জনে বড় অন্তরায়।

তিনি বলেন, বেনামি ঋণও এসডিজি অর্জনে বাধা। একই সঙ্গে ব্যাংক অর্থায়নের লিঙ্গ বৈষম্য প্রকট। এটি দূর করে ব্যাংকিং খাতের ৩০ শতাংশ নারী কর্মী হতে পারে।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, প্রকৃত কৃষকরা যাতে ঋণ পায় সেদিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সর্বোচ্চ নজরদারী করছে। প্রকৃত কৃষকদের হাতে ঋণ দিতে পারলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, টেকসই উন্নয়নে ব্রাঞ্চ ব্যাংকিংয়ের চেয়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওপর জোর দিতে হবে।

তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রতি পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে একটি করে ব্যাংকের শাখা খোলার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা লাভজনক না হওয়ায় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজন হলে এজেন্ট ব্যাংকিং ভর্তুকি দিয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *