ব্যাংকখাতে নৈতিকতার চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ: গভর্নর

স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, ব্যাংকখাতে নৈতিকতার চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকা পুরো ব্যাংকের পারফরম্যান্সের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে এটি আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ২০তম নুরুল মতিন মেমোরিয়াল লেকচার ‘ইথিকস ইন ব্যাংকিং’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গভর্নর এসব কথা বলেন।

ফজলে কবির বলেন, ব্যাংকখাতের যেসব আন্তর্জাতিক মানের চর্চাগুলোর আলোকে বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। যাতে ব্যাংকখাতে করপোরেট গভর্ন্যান্সের চর্চা করা সম্ভব হয়।

অনুষ্ঠানে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

মূল প্রবন্ধে ড. সাদিক আহমেদ বলেন, ১৯৯৭ সালের শেষ দিকেও ব্যাংকখাত অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অদক্ষ সরকারি ব্যাংকগুলোর আধিপত্য ছিল, যা মোট আমানতের ৬৭ শতাংশ এবং মোট ঋণের ৬৩ শতাংশ। দুর্বল শৃঙ্খলা ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে এসব ব্যাংকের অনেক ঋণই খেলাপি হয়েছে। সংক্ষেপে ব্যাংকিং নৈতিকতা তৎকালীন সময়ে বেশ দুর্বল ছিল। তবে সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং নৈতিকতার বিভিন্ন দিক রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্যাংকিং গভর্ন্যান্স। ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া সংস্কার কর্মসূচির আগে, ব্যাংকিং সেক্টরের প্রশাসন খুবই দুর্বল ছিল। এখন ব্যাংকিং নৈতিকতা আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে। ১৯৯৮ পরবর্তীসময়ে ব্যাংকখাতের সংস্কারগুলো মূলত ব্যাংকখাতের সুশাসন ও নৈতিকতার অনেকাংশ পুনরুদ্ধার করেছিল। এসময়ে ব্যাংকখাতের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন আইন-কানুন, নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যাংকখাতের সামগ্রিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, বিআইবিএম প্রতি বছর এ এফ এম নুরুল মতিন স্মরণে মর্যাদাপূর্ণ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। এ বছর ২০তম স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্যাংক সেক্টরে প্রতি বছর নৈতিকতার বিষয়ে নতুন বার্তা পেয়ে থাকে। এ বছর ড. সাদিক আহমেদের বক্তৃতা ব্যাংকখাতে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।

এ এফ এম নুরুল মতিন ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫১ সালে তৎকালীন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের গবেষণা বিভাগে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীসময়ে ১৯৬৩ সালে তাকে ওই ব্যাংকের অপারেশন বিভাগে বদলি করা হয়।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকেই বাংলাদেশের ব্যাংকিং পরিকাঠামো নির্মাণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২ প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সত্তর দশক এবং পরবর্তীসময়ে ব্যাংকখাতের উন্নতির জন্য নীতিনির্ধারণী বিষয়ে তার অবদান উচ্চমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তিনি ১৯৭৮ সালে মারা যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *