ব্যক্তির বিচার হবে, প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা লক্ষ্য নয়: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এস আলমসহ কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য নয়। তবে ব্যক্তির বিচার হবে। যারা অনিয়ম করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। আদালত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, সবার আমানতের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আমাদের প্রধান লক্ষ্য সবার আমানত ফেরত দেওয়া। এজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করা হবে। তবে তা বাচ্চা নয়. ললিপপ চাইলো, আর দিয়ে দিলাম। এ রকম হবে না। সব হিসাব-নিকাশ করে টাকা দেওয়া হবে।
গভর্নর আরো বলেন, ব্যাংকের পরিচালনায় বদল এনেও যেসব ব্যাংক এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সব আমানতকারীকে রক্ষা করা হবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে যাঁরা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছেন, সেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান মরতে দেওয়া হবে না। কারণ, সব প্রতিষ্ঠান জাতীয় সম্পদ। এর সঙ্গে ব্যাংকের বিনিয়োগ, উৎপাদন ও সরবরাহ জড়িত। এস আলম সহ অন্য অপরাধীদের শাস্তির জন্য আদালতে মামলা দায়ের করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মলনে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ইসালামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ অর্ধেক ঋণ নিয়ে গেছে। এর বাইরে গ্রুপটির এলসির বিপরীতে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো দায় পরিশোধ করা হয়েছে। এই দায়ের অর্ধেক সমন্বয় করা হবে তার নামে-বেনামে থাকা শেয়ার থেকে। বর্তমানে তার শেয়ার রয়েছে ১৬শ কোটি। যার বর্তমান শেয়ারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বাকি ১০ হাজার কোটি টাকার নতুন শেয়ার ইস্যু হবে। আল-রাজি, আইএফসিসহ বিভিন্ন সংস্থাকে এখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে।
এস আলম গ্রুপের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, এস আলম ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। শুধু টাকা নেয়নি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল, তাও ধ্বংস করে দিয়েছে। এ অবস্থায় পুরোনো উদ্যোক্তা সৌদি প্রতিষ্ঠান আল রাজিকে আনার চেষ্টা চলছে। আইএফসিকেও যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে।
ইসলামী ব্যাংকের উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, তিন মাসে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। প্রবাসী আয় বাড়ছে। নতুন বিনিয়োগ দেওয়া বন্ধ আছে। ব্যাংকের ২ হাজার ৭০০ এজেন্ট পয়েন্টে তিনজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা ব্যাংকের আমানত বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মালিকানা পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছাড়তে শুরু করেন। এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে ইসলামী ব্যাংকের ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা বিদেশিদের হাতে ছিল। এখন তা কমে ১৩ শতাংশে নেমেছে।