বোয়িংয়ের পরিবর্তে এয়ারবাসে ঝুঁকছে কান্তাস এয়ারওয়েজ

স্টাফ রিপোর্টার

নিজেদের অভ্যন্তরীণ বহরে থাকা মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের উৎপাদিত উড়োজাহাজের পরিবর্তে ইউরোপীয় কোম্পানি এয়ারবাসের উড়োজাহাজ বাড়াবে কান্তাস এয়ারওয়েজ। গতকাল এমনটা জানায় অস্ট্রেলিয়ার উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাটি। খবর রয়টার্স।

কান্তাস জানায়, অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ পরিবহনের জন্য ২০টি ‘এয়ারবাস এ৩২১এক্সএলআর’ এবং ২০টি ‘এয়ারবাস এ২২০-৩০০’ উড়োজাহাজ ক্রয় করবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বহরের জন্য আরো ৯৪টি এয়ারবাস নির্মিত উড়োজাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির। বর্তমানে এয়ারবাসের উড়োজাহাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্তটি কান্তাসের পর্ষদে অনুমোদন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের জুন নাগাদ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এর আগে পাইলটদের মতামত ও ব্যবসায়িক চুক্তির ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায় কান্তাস।

কান্তাস সূত্র জানায়, এয়ারবাসের এসব উড়োজাহাজ ২০২৩ সালের মাঝামাঝি নাগাদ সরবরাহ শুরু হতে পারে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে নতুন এসব উড়োজাহাজ দিয়ে পুরনো ৭৫টি ‘বোয়িং ৭৩৭এস’ এবং ২০টি ‘বোয়িং ৭১৭এস’ প্রতিস্থাপন করা হবে। নতুন সংযুক্ত হতে যাওয়া এসব উড়োজাহাজ পূর্বের চেয়ে আরো কম পরিমাণ কার্বন নিঃসরণকারী হবে বলেও জানায় কান্তাস।

কান্তাসের প্রধান নির্বাহী অ্যালান জয়েস বলেন, ভবিষ্যতের দিকে তাকালে এ পদক্ষেপ আমাদের শক্তিশালী মনোবলের দিকে ইংগিত দেয়। আগামী প্রজন্মে ন্যারোবডি এয়ারক্রাফটের চাহিদায় আমাদের লক্ষ্য স্থির করার জন্য এটি একটি মূল্যবান সিদ্ধান্ত।

কান্তাস থেকে উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ পাওয়াটা এয়ারবাসের জন্য একটি বিজয়ী সপ্তাহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে বুধবার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস নিজেদের বহরে যুক্ত করার জন্য ‘এয়ারবাস এ৩৫০ ফ্রেইটার’-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে। মঙ্গলবার কেএলএম রয়েল ডাচ এয়ালাইনস থেকে ন্যারোবডি উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

১৯৫৯ সাল থেকেই বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ দিয়ে নিজেদের বহর পরিচালনা করছে কান্তাস। একসময় সংস্থাটির বহরে থাকা প্রতিটি উড়োজাহাজ ছিল ‘বোয়িং ৭৪৭’ মডেলের। এয়ারবাসের ন্যারোবডি উড়োজাহাজ বাজারে দখল নেয়ার পর থেকে বোয়িং মূলত দূরপাল্লার ‘৭৮৭ ড্রিমলাইনার’ বিমান বেশি সরবরাহ করছে।

অ্যালান জয়েস জানান, এয়ারবাসের ওপর অত্যধিক পরিমাণে নির্ভরশীল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মোটেও উদ্বিগ্ন ছিলেন না তিনি। এ ধরনের নির্ভরশীলতা উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যতে দাম নিয়ে আলোচনায় বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর ক্ষমতাকে দুর্বল করে তোলে। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে বোয়িং অত্যন্ত আগ্রাসী আচরণ করবে। প্রতিষ্ঠানটি ‘৭৮৭ ড্রিমলাইনার’ নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।

বোয়িং জানায়, কান্তাসের এমন সিদ্ধান্তে সংস্থাটি বেশ হতাশা অনুভব করছে। তবে ভবিষ্যতে কান্তাসের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে সুযোগের অনুসন্ধান করছে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। ‘এয়ারবাস এ৩২০’ ন্যারোবডিভুক্ত উড়োজাহাজগুলোর জন্য মার্কিন এরোস্পেস কোম্পানি প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনির তৈরি ইঞ্জিন ব্যবহারের পরিকল্পনা কান্তাসের। এর আগে মার্কিন কোম্পানি জিই এভিয়েশন এবং ফ্রান্সের স্যাফরন এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সিএফএম ইন্টারন্যাশনালের ইঞ্জিন ব্যবহার করত কান্তাস। জানা যায়, কান্তাসের ক্রয়াদেশ অনুযায়ী ‘এয়ারবাস এ২২০’ মডেলের জন্যও ইঞ্জিন সরবরাহ করবে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি।

এছাড়া ওয়াইডবড়ি উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে ‘এয়ারবাস এ৩৫০’ ক্রয়ের পরিকল্পনা করছে কান্তাস। উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাটির সিডনি থেকে লন্ডনের উদ্দেশে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ফ্লাইট রুটের জন্য এ উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ দিতে পারে অস্ট্রেলীয় সংস্থাটি। আগামী বছর এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে কান্তাস সূত্রে জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *