বৈশ্বিক সংকটে চড়া হচ্ছে জ্বালানি তেলের বাজার
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে ডিজেল সংকট প্রকট হচ্ছে। এতে ঊর্ধ্বমুখী চাপের মধ্যে পড়েছে পেট্রোলিয়ামের বাজারদর। পরিস্থিতি মোকাবেলা করা না গেলে ২০০৮ সালের মতো ভয়ানক অবস্থা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই বছর জ্বালানি পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধি অতীতের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। খবর রয়টার্স।
মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) দেয়া তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ডিজেলসহ চোলাই করা জ্বালানি তেলের মজুদ ২০ লাখ ব্যারেল কমেছে। মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেলে।
উইকলি পেট্রোলিয়াম স্ট্যাটাস রিপোর্টে সংস্থাটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে গত ৭৯ সপ্তাহের মধ্যে ৫২ সপ্তাহেই চোলাই করা জ্বালানি তেলের মজুদ কমেছে। এ সময় সব মিলিয়ে ৬ কোটি ৭০ লাখ টন তেলের ঘাটতি তৈরি হয়। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের পর মজুদে এমন নিম্নমুখিতা দেখা যায়নি।
বর্তমানে জ্বালানি পণ্যের বাজারে যে সংকট চলছে তার মধ্যে সবচেয়ে সংকোচনের মধ্যে রয়েছে চোলাই করা জ্বালানি তেল। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যটির মজুদ মহামারীপূর্ব পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ২০ শতাংশ নিচে অবস্থান করছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ঘাটতি ১১ ও গ্যাসোলিনের ঘাটতি ১ শতাংশে পৌঁছেছে।
বাজারে চলমান সংকট মোকাবেলা করা না গেলে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে মজুদ ১০ কোটি ৪০ লাখ টন কমার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বাজারে ২০০৮ সালের মতো অস্থিতিশীলতা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, পুরো বিশ্বেই একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চোলাই করা জ্বালানি তেলের ভয়াবহ সংকট চলছে ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারেও। কারণ মহামারীর ধাক্কা সামলে ওঠার পরই এসব অঞ্চলে জ্বালানি চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েছে কয়েক গুণ। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও ডিজেলের উৎপাদনকে ছাড়িয়ে গেছে চাহিদা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে ইউরোপে চোলাই করা জ্বালানি তেলের মজুদ প্রায় ২০০৮ সালের মতো সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। সিঙ্গাপুরে বর্তমানে মজুদ ২০০৬ সালের পরবর্তী সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। মাঝামাঝি পর্যায়ের চোলাই করা জ্বালানি তেল, যেমন ডিজেল ও গ্যাস অয়েল সাধারণত পণ্যবাহী পরিবহন, শিল্প উৎপাদন, খামার, খনিজ উত্তোলন ও তেল-গ্যাস নিষ্কাশনে ব্যবহার করা হয়। ফলে এটি জ্বালানি তেল শিল্পে সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল পণ্য।
উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়া জ্বালানি পণ্যটির বাজারে ব্যাপক সংকট তৈরি করেছে। ২০০৭-০৮ সালেও একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। চলমান সংকটের কারণে চোলাই করা জ্বালানি তেলের দাম বর্তমানে পুরো জ্বালানি তেলের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। ডিজেলের বাজারদর গ্যাসোলিন ও অন্যান্য জ্বালানি তেলের জন্য ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করছে। ঊত্তোলন ব্যয়ও বাড়ছে ব্যাপক হারে। ইআইএর দেয়া তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে গত এক বছরে ডিজেলের দাম ৬১ শতাংশ বেড়েছে। গ্যাসোলিনের দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ।
তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে চোলাই করা জ্বালানি তেলের দাম অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে সহায়তা করে। পণ্যটির দাম বিশ্ব অর্থনীতিকে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। ওই বছর প্রতি ব্যারেল দাম ১৮৭ ডলারে উন্নীত হয়।
চলতি বছর বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার একই পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা করছিলেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলবে বলে জানিয়েছেন তারা। কারণ ইউক্রেনের হামলার কারণে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর বেশ কয়েক ধাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ কারণে দেশটির জ্বালানি বাণিজ্য বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। এটি বিশ্ববাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
ডিজেলসহ মাঝামাঝি পর্যায়ের চোলাই করা জ্বালানি তেল রফতানিতে শীর্ষস্থানীয় দেশ রাশিয়া। এর মধ্যে বেশির ভাগই রফতানি করা হয় ইউরোপে। ব্রিটিশ জ্বালানি কোম্পানি বিপি জানায়, ২০২০ সালে ইউরোপ মোট আমদানীকৃত অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ২৯ শতাংশই রাশিয়া থেকে ক্রয় করে। এছাড়া ৩৯ শতাংশ অন্যান্য জ্বালানি তেল আমদানি করে অঞ্চলটি। কিন্তু বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা চলতি বছর জ্বালানি পণ্যের এ প্রবাহকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করবে।