বাবুরহাটে বেচাকেনায় ধস

স্টাফ রিপোর্টার

ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের হাট নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাটে। বেচাকেনায় ধস নেমেছে। দিন দিন ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে বাবুরহাট। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

নরসিংদী সদর উপজেলার শীলমান্দি ইউনিয়নে অবস্থিত ‘প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার’ খ্যাত শেখেরচর দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের হাট। এ বাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার কাপড় ব্যবসায়ীরা শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট-প্যান্ট, বেডশিট, থান কাপড়, গজ কাপড় কিনে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করেন। শুধু তাই নয়, বাবুরহাটের উন্নতমানের কাপড় দিয়ে আড়ং, অঞ্জনস, রংসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি হচ্ছে। এখানকার শাড়ি, লুঙ্গিসহ হরেক রকমের পোশাক রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবুরহাটে কমবেশি প্রায় পাঁচ হাজার দোকান রয়েছে। ৭৯ বছর ধরে চলা এ হাট প্রথমে ছিল একদিনের। বর্তমানে সপ্তাহে বৃহস্পতি থেকে শনিবার তিনদিন বসে হাট। দেশের নিত্যব্যবহার্য কাপড়ের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করছে বাবুরহাট। তাঁতসমৃদ্ধ নরসিংদী ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলার উৎপাদিত কাপড় ও কাপড়জাত পণ্য বিক্রি হয় এ হাটে। রুমাল থেকে জামদানি পর্যন্ত সব কাপড় পাওয়া যায় বাবুরহাটে। তাই দেশের প্রায় সব জেলার কাপড় ব্যবসায়ীরা পাইকারি কাপড় কিনতে এ হাটে আসেন।

বাবুরহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, নিত্যনতুন ডিজাইনের শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট-প্যান্ট, বেডশিট, থান কাপড়, গজ কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। তবে আশানুরূপ ক্রেতা নেই। হাটের বেশিরভাগ দোকানি অলস সময় কাটাচ্ছেন। হাতেগোনা কিছুসংখ্যক পাইকার দেখা গেলেও তারা তুলনামূলক কম কাপড় কিনছেন।

ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে কাপড় কিনতে আসা আবু জাহিদ সিদ্দিক  বলেন, ‘এ হাটে সুলভ মূল্যে সব ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। এখান থেকে কাপড় কিনে ভালুকার স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। তবে খুচরা পর্যায়ে বেচাকেনা কম। তাই এবার কম কাপড় কিনেছি।’

৬০ বছরের পুরোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নারায়ণ বস্ত্রালয়ের মালিক সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, ‘এখন ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো নয়। খুচরা বেচাকেনা কম। তাই বাবুরহাটে পাইকারের চাপও কম। খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে না পারলে আমাদের বেচাকেনা কম হয়।’

তিনি বলেন, ঈদের সময় বেচাকেনা ভালো হলেও চার সপ্তাহ ধরে বেচাকেনা খুবই খারাপ। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হবে।

মেসার্স রাজলক্ষ্মী প্রিন্ট শাড়ির স্বত্বাধিকারী এম রুবেল বলেন, হাটে ব্যবসার যে পরিস্থিতি তাতে আমরা শঙ্কিত। ব্যবসার অবস্থা এতটাই খারাপ যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

তিনি বলেন, খুচরা পর্যায়ে বেচাকেনা কম হওয়ায় পাইকারি বাজারে ক্রেতা নেই। তাছাড়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। চূড়ান্ত পর্যায়ের ভোক্তারা যদি ক্রয় না করেন তাহলে খুচরা দোকানদাররা আমাদের কাছে আসবেন না।

শাড়ি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে সবকিছু মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তারা খাদ্যদ্রব্য কিনবে নাকি কাপড় কিনবে?

তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৫০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০, সয়াবিন তেল ২০০ টাকা লিটার। মানুষ যে টাকা বেতন পায় গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল দিয়ে মাসের অর্ধেক চলতে পারে না। তাহলে কাপড় কিনবে কীভাবে?

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের পর থেকে বেচাকেনার অবস্থা এত খারাপ যে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আগের তুলনায় কাপড়ের দাম কিছুটা কমেছে। তারপরও ক্রেতা নেই।

এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আলী হোসেন শিশির বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিই এখন টালমাটাল। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, কাপড় উৎপাদনের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। আগে যে কাপড়ের উৎপাদন খরচ ছিল ১০০ টাকা, সেটা এখন ১৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়ায় প্রোডাকশন কমে গেছে। এতে বেচাকেনাও কিছুটা কমেছে। তবে এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও বেচাকেনা কমেছে।

তিনি বলেন, আগে যেসব বিদেশি বায়ার (ক্রেতা) ১০ লাখ পিস মাল নিতেন তারা এখন পাঁচ লাখ পিস নিচ্ছেন। তারা অনেক ইন্টারন্যাশনাল শোরুম বন্ধ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক চাপটাই বাংলাদেশে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *