বৈশ্বিক দাম খাদ্যপণ্যের কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার

বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে কমেছে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক। মূলত আকাশচুম্বী অবস্থান থেকে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম লক্ষণীয় মাত্রায় কমায় সূচকে এমন নিম্নমুখী পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতি মাসেই বিশ্বজুড়ে কেনাবেচা হওয়া প্রধান প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে সূচক প্রকাশ করে এফএও। ডিসেম্বরে এফএওর গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৩৩ দশমিক ৭ পয়েন্ট। নভেম্বরের তুলনায় মূল্যসূচক কমেছে দশমিক ৯ শতাংশ। তবে এটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় এখনো ২৩ দশমিক ১ শতাংশ উচ্চতায় অবস্থান করছে। সব পণ্যের মধ্যে শুধু দুগ্ধপণ্যের দাম বেড়েছে।

এদিকে শুধু ডিসেম্বরে কমলেও ২০২১ সালে খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখীই ছিল। পুরো বছরে খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১২৫ দশমিক ৭ পয়েন্টে, যা ২০২০ সালের তুলনায় ২৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

এফএওর এক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বলেন, সাধারণত পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম সংশ্লিষ্টদের উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত করে। কিন্তু ২০২১ সালে ঘটেছে তার উল্টো ঘটনা। এ সময় উৎপাদন উপকরণ ও কাঁচামালের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। অন্যদিকে চলমান মহামারী পরিস্থিতি এবং জলবায়ুসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। ফলে উৎপাদকরা মোটাদাগে নিরুৎসাহিত হয়েছেন বেশি। ফলে চলতি বছর বাজারে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ।

এফএওর মূল্যসূচক অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরে দানাদার খাদ্যশস্যের দাম নভেম্বরের তুলনায় দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর ব্রাজিলে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ভুট্টা উৎপাদনে বিপর্যয় নামে। এটি বৈশ্বিক সরবরাহে প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে পণ্যটির শক্তিশালী চাহিদার কারণে ক্রমেই বাড়ছিল দাম। কিন্তু এতে ভারসাম্য এনেছে গম। দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোয় কৃষিপণ্যটির উৎপাদন ভালো হওয়ায় রফতানি মূল্য কমেছে বড় পরিসরে। এটি ডিসেম্বরে খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক কমাতে সহায়তা করেছে। তবে বছরজুড়ে খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক বেড়ে প্রায় এক দশকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব পণ্যের গড় দাম ২০২০ সালের তুলনায় ২৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ভুট্টার দাম ৪৪ দশমিক ১ ও গমের ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। যদিও চালের দাম কমেছে ৪ শতাংশ।

ডিসেম্বরে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এফএও জানায়, নভেল করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিস্তার ভোজ্যতেলের আমদানি চাহিদায় প্রভাব ফেলে। নতুন করে ওমিক্রনের সংক্রমণপ্রবাহ চাহিদাকে আরো দুর্বল করে তোলে। এ কারণে পাম অয়েল ও সূর্যমুখী তেলের বাজারদর কমে আসে। এটি সর্বোপরি ভোজ্যতেলের বাজারে প্রভাব ফেলেছে। তবে ডিসেম্বরে কমলেও বছরজুড়ে ভোজ্যতেলের মূল্যসূচক ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। ২০২০ সালের তুলনায় পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে ৬৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

গত বছরের ডিসেম্বরে চিনির দাম নভেম্বরের তুলনায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। এর মধ্য দিয়ে পাঁচ মাসের সর্বনিম্নে নেমেছে ভোগ্যপণ্যটির দাম। মূলত পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সম্ভাব্য প্রভাব দাম কমাতে সহায়তা করেছে। পাশাপাশি ইথানলের দাম কমে যাওয়া এবং ব্রাজিলের মুদ্রার বিনিময় মূল্য হ্রাসও এতে ভূমিকা রেখেছে। তবে বছরজুড়ে চিনির দাম ২০২০ সালের তুলনায় ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে পণ্যটির দাম পাঁচ বছরের সর্বোচ্চে উঠে এসেছে।

এদিকে অন্যান্য পণ্যের দাম কমলেও ডিসেম্বরেও ঊর্ধ্বমুখী ছিল দুগ্ধপণ্যের মূল্যসূচক। নভেম্বরের তুলনায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। পশ্চিম ইউরোপ ও ওশেনিয়া মহাদেশে দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মাখন ও গুঁড়ো দুধের দাম। বছরজুড়ে দুগ্ধপণ্যের দাম ২০২০ সালের তুলনায় গড়ে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *