বৈশ্বিক গম উৎপাদন কমতে পারে
২০১৯ সাল ইতিহাসের অন্যতম উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর জের ধরে কানাডা থেকে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া থেকে রাশিয়াসহ দেশে দেশে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে খরা। এর প্রভাব পড়ছে কৃষি উৎপাদনেও।
প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে চলতি ২০১৮-১৯ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী গম উৎপাদন আগের মৌসুমের তুলনায় তিন কোটি টন কমতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিলের (আইজিসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে ছয় বছর পর এবারের মৌসুমে কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন কমতে পারে। তবে উৎপাদন কমলেও ২০১৮-১৯ মৌসুমে গমের বৈশ্বিক ব্যবহার আগের মৌসুমের তুলনায় বাড়তে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর ওয়াল্ডগ্রেইনডটকম ও এগ্রিমানি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যমান খরা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন প্রাক্কলন নভেম্বরের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। এর ছয় মৌসুম পর এবারই প্রথম বৈশ্বিক গম উৎপাদনে মন্দাভাব দেখা যেতে পারে।
আগের মৌসুমের তুলনায় কমলেও গত নভেম্বরে প্রকাশিত পূর্বাভাসের তুলনায় কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন প্রাক্কলন ৮০ লাখ টন বাড়িয়েছে আইজিসি। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর খরা পরিস্থিতির কারণে এবারের মৌসুমে গমের বৈশ্বিক উৎপাদন আগের মৌসুমের রেকর্ড অবস্থান থেকে নেমে আসতে পারে।
এদিকে উৎপাদন খাতে মন্দাভাব বজায় থাকলেও ২০১৮-১৯ মৌসুমে গমের বৈশ্বিক ব্যবহার আগের মৌসুমের তুলনায় ৪০ লাখ টন বাড়তে পারে। এ সময় কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহার দাঁড়াতে পারে ৭৪ কোটি ৫০ লাখ টনে।
লন্ডনভিত্তিক আইজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ মৌসুমে বৈশ্বিক গম উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছিল। ওই মৌসুমে বিশ্বব্যাপী সব মিলিয়ে ৭৯ কোটি ৭০ লাখ টন গম উৎপাদন হয়েছিল। দেশে দেশে প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে ২০১৮-১৯ মৌসুমে বৈশ্বিক গম উৎপাদন কমে দাঁড়াতে পারে ৭৬ কোটি ৭০ লাখ টনে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় তিন কোটি টন কম।
আগের মৌসুমে গমের বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ৭৪ কোটি ১০ লাখ টন। গত নভেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০১৮-১৯ সালের গমের বৈশ্বিক ব্যবহার ৭৩ কোটি ৯০ লাখ টন প্রাক্কলন করেছিল আইজিসি। অর্থাৎ, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮-১৯ মৌসুমে গমের বৈশ্বিক ব্যবহার প্রাক্কলন ৬০ লাখ টন বাড়িয়েছে।
এদিকে ২০১৭-১৮ মৌসুম শেষে বিশ্বব্যাপী গমের সমাপনী মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৭ কোটি টনে। চলতি মৌসুম শেষে কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক মজুদ ৭০ লাখ টন কমে ২৬ কোটি ৩০ লাখ টনে নেমে আসতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে আইজিসি।
২০১৭-১৮ মৌসুমের তুলনায় এ সময় কৃষিপণ্যটির সমাপনী মজুদ কমেছে ৩ শতাংশ। তবে আগের মৌসুমের তুলনায় কমলেও গত নভেম্বরে প্রকাশিত পূর্বাভাসের তুলনায় সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে গমের বৈশ্বিক সমাপনী মজুদ ১০ লাখ টন বাড়িয়েছে আইজিসি। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এবারের মৌসুমে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের চাহিদা ও সরবরাহে বিদ্যমান উদ্বৃত্ত কমে আসতে পারে।