বৈশ্বিক উত্তোলন নিয়ে বিপরীত অবস্থানে ওপেক-আইইএ
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন বিষয়ে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল রূপ নিচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও দরপতন রোধ করার জন্য বছরের শেষভাগে এসে অবস্থান বদলে জ্বালানি তেলের উত্তোলন আরো কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)।
তবে এ বিষয়ে পুরোপুরি ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। প্রতিষ্ঠানটির মতে, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ‘কাণ্ডজ্ঞান বজায় রেখে’ সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।
উত্তোলন বাড়ানো-কমানোর বিষয়ে ওপেক ও আইইএর এ বিপরীতমুখী অবস্থান আগামী দিনগুলোয় জ্বালানি তেলের বাজারকে আরো অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের উত্তোলন বাড়িয়েছে ওপেকভুক্ত দেশগুলো। চলতি বছরের অক্টোবরে এসব দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন দৈনিক দুই লাখ ব্যারেল বেড়ে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে।
২০১৭ সালের একই সময়ের তুলনায় গত অক্টোবরে ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত উত্তোলন বেড়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল। এ সময় ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুধু ইরান ও ভেনিজুয়েলায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন যথাক্রমে চার লাখ ব্যারেল ও ছয় লাখ ব্যারেল কমেছে।
বিপরীতে সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নাইজেরিয়া, কুয়েতসহ তুলনামূলক বৃহত্তম জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী দেশগুলোয় পণ্যটির উত্তোলন চাঙ্গা হয়েছে। ওপেক-বহির্ভূত রাশিয়ায়ও জ্বালানি তেল উত্তোলন সোভিয়েত-পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ৮০ ডলার পেরিয়ে যায়। এ পরিস্থিতি উত্তোলনকারী ও রফতানিকারক দেশগুলোর জন্য সুখকর হলেও ভোক্তা ও আমদানিকারক দেশগুলোর ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।
ফলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জ্বালানি পণ্যটির যৌক্তিক দাম নির্ধারণের দাবি ওঠে। এদিকে চলতি নভেম্বরে ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। ফলে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল রফতানি কমার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন আগাম বাড়িয়েছে সৌদি আরব ও রাশিয়া। ফলে জ্বালানি পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। আগামী ডিসেম্বরে ওপেকের আওতায় জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাসসংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ শেষে পণ্যটির উত্তোলন আরো কমাতে আলোচনা শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।
এর আওতায় রাশিয়াসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন বর্তমানের তুলনায় দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেলের বেশি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরব। যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।
ওপেকের এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে আইইএ। স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লাভায় মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর জ্বালানিমন্ত্রীদের এক বৈঠকে অংশ নিয়ে আইইএ প্রধান ফাতিহ বিরোল বলেন, বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি বেশ সাবলীল এবং সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত।
এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন নতুন করে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা অযৌক্তিক। এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জ্বালানি পণ্যটির বাজার পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে পারে।
এ বিষয়ে প্যারিসভিত্তিক আইইএ প্রধান বলেন, উত্তোলনকারী ও ভোক্তা দেশগুলোর কাছে আমার আবেদন থাকবে, এ জটিল সময়ে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলনের বিষয়ে কাণ্ডজ্ঞান বজায় রেখে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
এর আগে এক প্রতিবেদনে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ২২ লাখ ব্যারেল ও ১৮ লাখ ব্যারেল প্রাক্কলন করেছিল আইইএ। চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত আইইএর মাসিক প্রতিবেদনে এর পরিমাণ যথাক্রমে দৈনিক ২৪ লাখ ব্যারেল ও ১৯ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিবেদনে জ্বালানি পণ্যটির সম্ভাব্য উত্তোলন নিয়ে ওপেক ও আইইএর বিপরীতমুখী অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।