বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনের রেকর্ড

বিশ্বব্যাপী ইস্পাতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাড়তি চাহিদার চাপ সামাল দিতে দেশে দেশে পণ্যটির উৎপাদনও বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে ইস্পাতের বার্ষিক বৈশ্বিক উৎপাদনে। বিদায়ী বছরে বিশ্বব্যাপী ইস্পাতের সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি বেড়ে ১৮০ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে।

এর মধ্য দিয়ে তিন বছর ধরে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে ধারাবাহিক চাঙ্গাভাব বজায় রইল। গত বছর চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ দেশে ইস্পাতের উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় বাড়লেও জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় পণ্যটির উৎপাদনে মন্দাভাব বজায় ছিল। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর রয়টার্স ও মেটাল বুলেটিন।

ডব্লিউএসএর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী সব মিলিয়ে ১৮০ কোটি ৮৬ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী ১৭২ কোটি ৯৮ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়েছে ৭ কোটি ৮৮ লাখ টন।

বিদায়ী বছরে বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ চীনে সব মিলিয়ে ৯২ কোটি ৮৩ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এ সময় চীন বাদে বিশ্বের বাকি দেশগুলো সম্মিলিতভাবে ৮৮ কোটি ৩ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করেছে। ২০১৭ সালে চীনের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ৮৭ কোটি ৯ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল।

চীন বাদে বিশ্বের বাকি দেশগুলোয় পণ্যটির উৎপাদন দাঁড়িয়েছিল ৮৫ কোটি ৯০ লাখ টনে। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে চীনে ইস্পাত উৎপাদন বেড়েছে ৫ কোটি ৭৪ লাখ টন। চীন বাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ইস্পাতের সম্মিলিত উৎপাদন বেড়েছে ২ কোটি ১৩ লাখ টন।

এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে তিন বছর ধরে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী ১৬২ কোটি ৭২ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। ওই বছর চীনে পণ্যটির উৎপাদন দাঁড়িয়েছিল ৮০ কোটি ৭৬ লাখ টনে। অন্যদিকে চীন বাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশে সব মিলিয়ে ৮১ কোটি ৯৫ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল।

বিদায়ী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত উৎপাদন খাতেও চাঙ্গাভাব বজায় ছিল। এ সময় দেশটিতে মোট ৮ কোটি ৬৭ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। রাশিয়ায় পণ্যটির উৎপাদন দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১৭ লাখ টনে। এ সময় ইউক্রেনে ২ কোটি ১১ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে।

বিদায়ী বছরে জার্মানির কারখানাগুলোয় ইস্পাত উৎপাদন ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখ টনে। ফ্রান্সে মোট ১ কোটি ৫৪ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৭ শতাংশ কম। স্পেনে পণ্যটির উৎপাদন দশমিক ১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ টনে। অন্যদিকে গত বছর ইতালিতে মোট ২ কোটি ৪৫ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।

গত বছর তুরস্ক ও ব্রাজিলে যথাক্রমে ৩ কোটি ৭৩ লাখ ও ৩ কোটি ৪৭ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। বছরান্তে তুরস্কে পণ্যটির উৎপাদন দশমিক ৬ শতাংশ কমলেও ব্রাজিলে ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। বিদায়ী বছরে ইরানে ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টনে।

২০১৮ সালে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় সম্মিলিতভাবে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ কম। এ সময় জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনে ইস্পাত উৎপাদন কমলেও বেড়েছে ইতালিতে।

এদিকে ২০১৮ সালে বৈশ্বিক ইস্পাত শিল্পে সবচেয়ে ভালো করেছে ভারত। দেশটি প্রথমবারের মতো জাপানকে টপকে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এ সময় ভারতের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ১০ কোটি ৬৫ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে জাপানে ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৪৩ লাখ টন, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ কম। বিদায়ী বছরে চতুর্থ শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় আগের বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বেড়ে ইস্পাতের সম্মিলিত উৎপাদন ৭ কোটি ২৫ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *