বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯০ শতাংশে কমবে: বিশ্বব্যাংক

চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯০ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি বৃদ্ধির বিষয়টিকে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ একটি প্রতিবেদনে ‘তমসাচ্ছন্ন আকাশ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। খবর বিবিসি ও সিনহুয়া।

বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে বার্ষিক মূল্যায়নে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, ২০২০ সালেও প্রবৃদ্ধির এ নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে এবং তা ২ দশমিক ৮০ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিতে কিছু ইতিবাচক খবরও রয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া শ্লথগতি এখন পর্যন্ত ‘সুনিয়ন্ত্রিত’ বলেই দাবি করেছে তারা।

মূলত ধনী দেশগুলোয়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এ শ্লথগতি বেশি অনুভূত হবে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়। তবে তা ইউরোজোন বা জাপানেও সম্প্রসারিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর অব্যাহতির প্রভাব কমে আসার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে শ্লথগতি দেখা দিয়েছে। এতে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ১ দশমিক ৬০ শতাংশে, যা গত বছরের ২ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অর্ধেক।

একই সঙ্গে চীনের অর্থনীতিতে শ্লথগতি দেখা দিলেও উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোয় প্রবৃদ্ধি চাঙ্গা থাকবে, যা এ দশকের শুরু থেকে অব্যাহত রয়েছে।

২০২১ সালে চীনে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে, যা মোটামুটি শক্তিশালী হলেও গত দুই দশকের তুলনায় কিছুটা দুর্বল। ১৯৮০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চীনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের কাছাকাছি।

বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনটির মুখ্য লেখক ফ্রানজিসকা অনসর্গ বিবিসিতে এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে চীনে অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই এ শ্লথগতি আনা হয়েছে।’

আগামী কয়েক বছর বিশ্বের অর্থনীতিতে কিছুটা শ্লথগতি দেখা যেতে পারে। এজন্য এবারের বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ডার্কেনিং স্কাইজ’ বা তমসাচ্ছন্ন আকাশ। কিছু মেঘ আবার পরিচিত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এরই মধ্যে দুর্বল হতে শুরু করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ বড় একটি ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে।

বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। উভয় দেশের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে প্রায় ২ দশমিক ৫০ শতাংশ বৈশ্বিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরো শুল্ক আরোপের যে হুমকি দেয়া হয়েছে, তা কার্যকর হলে ক্ষতি দ্বিগুণ হবে বলে আশঙ্কা বিশ্বব্যাংকের।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্ববাণিজ্যে আরো সংরক্ষণবাদিতার সম্প্রসার ঘটতে পারে। এতে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির অর্থনৈতিক কর্মতত্পরতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চীনের প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কারণ ওই দেশগুলোর শিল্পপণ্য, জ্বালানি ও ধাতবপণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হচ্ছে চীন।

ফ্রানজিসকা অনসর্গ বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ২০ শতাংশ সম্পন্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এবং এবং বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ তাদের। যদি উভয় দেশের অর্থনীতি ধাক্কা খায়, তাহলে পুরো বিশ্বেই তার প্রভাব পড়ে।

যদিও বিশ্বব্যাংকের ধারণা, উভয় দেশ মন্দায় পড়বে না, তবে যুক্তরাষ্ট্র আগামী বছর এর মধ্য দিয়ে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কিছু ভাষ্যকার। যদি মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়, তাহলে বৈশ্বিক মন্দাও দ্রুত বাড়বে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অতীতে কোনো বছরে মন্দার ঝুঁকি ছিল ৭ শতাংশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে শ্লথগতি দেখা দিলে তার সম্ভাবনা বেড়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে।

নতুন বছরে অর্থবাজারের আরেকটি বড় ঝুঁকি হচ্ছে ব্রেক্সিট। যেসব দেশের অর্থনীতি ইউরোপে রফতানির ওপর নির্ভরশীল, তারা সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) উভয় পক্ষের জন্যই অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হবে। এতে ইইউর ওপর গভীরভাবে নির্ভরশীল পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *