বেসরকারি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে আইএফসি
বেসরকারি খাত চাঙ্গা করতে আগামী পাঁচ বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা।
হালকা প্রকৌশল, অর্থনৈতিক অঞ্চল, আর্থিক ও পুঁজিবাজার এবং প্রবৃদ্ধি-সক্ষম টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করবে সংস্থাটি। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করবে সংস্থাটি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রায় সাড়ে ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। এই প্রতিশ্রুতির আওতায় বিনিয়োগ করবে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) আইএফসি থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটির আঞ্চলিক পরিচালক হেক্টর গোমেজ অ্যাং বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে এবং বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছেন।
আইএফসির এই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ দ্বিগুণ করা। এর প্রধান উদ্দেশ্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করা এবং সবুজ প্রবৃদ্ধিতে উত্সাহিত করা।’
আইএফস’র আঞ্চলিক পরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) হেক্টর গোমেজ অ্যাং বাংলাদেশে পাঁচ দিনের সফর শেষে এসেছেন। এসময় ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সম্ভাব্য নতুন ক্লায়েন্ট এবং অন্যান্য মূল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গোমেজ অ্যাং এর সঙ্গে বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের জন্য সম্প্রতি নিযুক্ত আইএফসি’র কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যান এবং আইএফসি শিল্প বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঞ্চালনের পাশাপাশি অবকাঠামো এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের জন্য বিনিয়োগ করবে সংস্থাটি।
গোমেজ বলেন, ‘আইএফসি জ্বালানি বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করে এবং ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ২০ শতাংশের বেশি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করছে। আমরা এনার্জি এবং ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে আরও কিছু করতে চাই। এ ছাড়াও, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, জলবায়ু এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সবুজ, সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনখাতে নতুন সুযোগগুলো তৈরি করবো।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, করোনা সংকটে ৪৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে আইএফসি। ব্যবসায়ীকে সাহায্য করতে এবং চাকরি টিকিয়ে রাখতেই এই বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগগুলো ব্যবসাগুলোকে সচল রাখতে, রপ্তানি পুনরায় শুরু করতে এবং চাকরি নিশ্চয়তায় সহায়তা করেছে৷
বাংলাদেশে নিযুক্ত আইএফসি’র নতুন কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যানন বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আরও ২৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চাই। বাংলাদেশের বেসরকারি খাত চাঙ্গা করতে ২০১০ সাল থেকে সংস্থাটি সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে আইএফসি। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ বাংলাদেশের সঙ্গে ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপন করছে। আইএফসি বেসরকারী খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এবং অর্থনীতির বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্য। উদীয়মান বাজারে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বৃহত্তম বৈশ্বিক উন্নয়ন সংস্থা। আমরা ১০০টির বেশি দেশে কাজ করি, আমাদের মূলধন, দক্ষতা এবং প্রভাব ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাজার এবং সুযোগ তৈরি করি৷’
তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশর বেসরকারি খাত এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৩১ বিলিয়ন প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করা হয়েছে। চরম দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে এবং বেসরকারি খাতের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করতেই এমন উদ্যোগ।’
গোমেজ বলেন, একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ ঢাকা কেন্দ্রিক। সুতরাং ঢাকার আবাসন খাত বিকাশে আগ্রহী আমরা। যা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ আরও বেশি বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ উত্সাহিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়া একটি চ্যালেঞ্জ, তাই টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক ঋণের দিকে নজর দেওয়া অপরিহার্য। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা খুবই আশাব্যঞ্জক এবং আমরা সহযোগিতার জন্য উন্মুখ।’
গোমেজ অ্যাং বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধিতে বেসরকারি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’