বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের নিচে

স্টাফ রিপোর্টার

টানা তৃতীয় মাসের মতো বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের নিচে। গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে। আগের মাস আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এর আগে ২৩ মাস আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে গেলে নতুন কর্মসংস্থানে এর প্রভাব পড়ে। বাধা তৈরি করে কর্মসংস্থানে। তাছাড়া দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট, মুদ্রা পাচারসহ আমদানি কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমেছে। এটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, তারল্য সংকটের প্রভাব পড়েছে ঋণ বিতরণে। আমানতে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় বেসরকারি ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। তাছাড়া মূলস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতিতে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কমে যাচ্ছে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ।

আর এসব কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংক।

মূলত বাজার থেকে টাকা উঠে যাওয়া আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আমানতে প্রবৃদ্ধি কম। আবার বেনামি ঋণসহ নানা কারণে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখছেন। এতে তারল্য সংকটের কারণে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটিসহ মোট আটটি ব্যাংক অনেক দিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এটি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের (সেপ্টেম্বর) তুলনায় ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা।

ঋণস্থিতির হিসাব ধরা হয় সুদসহ। ফলে নিট ঋণ খুব বেড়েছে তা নয়। তবে আলোচিত সময়ে বেসরকারি খাতে পরিস্থিতি কম হলেও সরকারের ঋণ বেড়েছে দ্রুত। যদিও চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধে সরকার মনোযোগী।

বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি সাধারণত দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো দুই অঙ্ক থেকে নেমে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে চলে আসে। আর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ব্যাপক হারে কমে গিয়ে ২০২০ সালের মে শেষে প্রবৃদ্ধি নামে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে পরের মাস জুন থেকে তা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ঠিক থাকার পরও ২০২১ সালের অক্টোবরে টানা দুই মাস বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের ঘরে আটকে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা প্রাক্কলনের চেয়েও কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। আগের ২০২২-২০২৩ অর্থবছর প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তার আগে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ছিল অনেক কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *