বিসিআইসি টালবাহানা করে পাওনা টাকা দিচ্ছে না
জাহাজ ভাড়া, ট্রাক ভাড়া, লোড আনলোড বাবদ ২১১ কোটি টাকা Nobab & Company পাওনা সহ আন্তর্জাতিক জাহাজ ভাড়া বাবদ ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার পাওনা বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাষ্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে। Nobab & Compan ‘র পাওনা টাকা এবং ডলার না দিয়ে টালবাহানা করছে বিসিআইসি। নানা অজুহাতে দিনের পর দিন Nobab & Company কে ঘুরাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীক ক্ষতি হয়েছে কোম্পানির বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিসিআইসির ঊর্ধ্বতন কতিপয় কর্মকর্তা যখন কিছুতেই পারছিল না; তখন মিথ্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু হাইকোর্টি কোম্পানির পক্ষে রায় দেয়- তারপরও পাওনা টাকা পরিশোধ করছে না বিসিআইসি।
এদিকে আন্তর্জাতিক কোম্পানির নিকট থেকে জাহাজ ভাড়া করা হয়েছে। ওই কোম্পানিকে জাহাজ ভাড়া না দেওয়ায় ইমেজ সংকটে পড়েছে বিসিআইসি। এখন বিসিআইসি’র পণ্য আমদানি করার জন্য আন্তর্জাতিক কোন কোম্পানির জাহাজ ভাড়া দিতে চায় না। দুএকটি কোম্পানি রাজি হলেও ভাড়া অনেক বেশি চায়।
সরকার টু সরকার (G to G) চুক্তির মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানি করার লক্ষ্যে ক্যারিং কন্ট্রাক্টার হিসেবে কাতার, সৌদি আরব, ইউএই, রুয়াইস সহ বিভিন্ন বন্দর থেকে সার লোড করে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে খালাস করা হয়। এসব সার আমদানি করার জন্য ক্যারিং কন্ট্রাক্টার হিসাবে কার্যাদেশ পায় Nobab & Company.
বছরে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ১৮ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন করার ক্ষমতা ১২ লাখ মেট্রিক টন থাকলেও উৎপাদন করা হয় মাত্র ৪ লাখ মাট্রিক টন। বাকি সার (G to G) চুক্তির মাধ্যমে আমদানি করা হয়।
সার কারখানাগুলোতে গ্যাস না দিয়ে উৎপাদন ব্যাহত করা হয়। আর এই সুযোগ নিয়ে সার আমদানি করে বিসি্আইসি। সার উৎপাদন না করে আমদানি করলে সরকারের লাভ না হলেও- বিসিআইসির ঊর্ধ্বতন কতিপয় কর্মকর্তা লাভবান হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিনিয়র শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, Nobab & Company’র সার স্ংক্রান্ত বিষয়টি হ্যান্ডেলিং করেছেন বিসিআইসি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান। কিন্তু তিনি এখন নেই; তারপরও যে পরিমাণ সার সেই সময় পাইপ লাইনে থাকার কথা ছিল- সে পরিমাণ সার ছিল না। যে কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আইনগত ভাবে Nobab & Company যতটুকু প্রাপ্য তা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি আরো বলেন, Nobab & Company যে টাকা দাবি করেছেন, তা যাচাই বাছাই করার পর বলা যাবে; কোম্পানিটি কি পরিমান টাকা পাবে এবং তা কতদিনের মধ্যে দেওয়া যাবে।
Nobab & Company’র মালিক Md. Nobab Khan বলেন, করোনাকালীন সময়ে ক্যারিং কন্ট্রাক্টার হিসাবে সার আমদানি করে ট্রানজিট পয়েন্টে রেখেছি। আগের অর্থ বছরে আনা ১.৪০ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে আনা ৩.৭০ লাখ মেট্রিক টন সার সহ মোট ৫.১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়।
তিনি বলেন, বিসিআইসির নিম্নমানের ব্যাক হওয়ায় ৩ শতাংশ সার ক্ষতি হয়; এছাড়া তদন্ত কমিটির গড়িমশি এবং গোডাউন খালী না থাকার অভিযোগে বিসিআইসি সার সংগ্রহ না করায় আরো কিছু সার নষ্ট হয়েছে। কিছু সার জমাট বাধা অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় ৪.৫১ লাখ মেট্রিক টন সার বিসিআইসি গ্রহণ করে। বাকি ৫৯ হাজার মেট্রিক টন সার ট্রানজিট পয়েন্টে থাকার কথা। এর মধ্য থেকে যাচাই বাছাই করে আরো ৩৮ হাজার মেট্রিক টন সার নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তদন্ত কমিটি। বাকি ২১ হাজার মেট্রিক টনের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই করে বলা যাবে- কি পরিমাণ সার ট্রানজিট পয়েন্টে আছে। জমাট বাধা অবস্থায় কি পরিমাণ আছে আর নষ্ট কি পরিমাণ হয়েছে।
Md. Nobab Khan বলেন, আমার আনা সারের প্রতিটনের জাহাজ ভাড়া ছিল ৩৫ মার্কিন ডলার। আর বিসি্আইসি সংগ্রহ করেছে প্রতিটনের ভাড়া ১৬০ মার্কিন ডলার। আমার সার সংগ্রহ না করে, অন্য কন্ট্রাক্টারের সার সংগ্রহ করার মাধ্যমে সরকারের কোটি টাকার উপরে জাহাজ ভাড়া বাবদ ক্ষতি করেছে বিসিআইসি।
তিনি বলেন, বিসিআইসির কাছে আমার পাওনা টাকা অবিলম্বে ফেরৎ চাই। কারণ ব্যাংকে দিন দিন সুদ বাড়ছে। ব্যবসায়ীক ক্ষতি হয়েছে। তাই এ অবস্থার অবসান চাই।
তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে বিসিআইসির তৎকালিীন চেয়ারম্যান শাহ মোঃ ইমদাদুল হক এবং তার কতিপয় সহযোগি জিএম ক্রয় শহীদুল ইসলাম এবং জিএম মার্কেটিং মনজুর রেজা এবং জিএম সাইফুল আলম তাদের নিজস্ব স্বার্থে ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা সার স্ংগ্রহ না করে আমার ক্ষতি করেছে।