বিশ্ববাজারে প্রকট হচ্ছে চিনির ঘাটতি
চিনির বৈশ্বিক বাজারে সংকট যেন পিছু ছাড়ছে না। চলতি বছর শীর্ষ চিনি সরবরাহকারী দেশ ব্রাজিলে ভোগ্যপণ্যটি উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিলে বৈশ্বিক উৎপাদন নিম্নমুখী হয়ে ওঠে। সরবরাহ নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। এর মধ্যেই নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে ভারতের ঊর্ধ্বমুখী ইথানল উৎপাদন। দেশটি আখ থেকে চিনির পরিবর্তে ইথানল উৎপাদন বাড়ানোয় বিশ্ববাজারে পণ্যটির ঘাটতি প্রকট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর্থিক পরিষেবা সংস্থা স্টোনেক্স সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিরা জানান, চলতি বছরের অক্টোবরে চিনির ২০২১-২২ বিপণন মৌসুম শুরু হয়েছে। এ মৌসুমে পণ্যটির বৈশ্বিক সরবরাহে তীব্র মন্দা দেখা দিতে পারে। সরবরাহ কমলেও ঊর্ধ্বমুখী থাকবে চিনির চাহিদা।
এ মৌসুমে ভোগ্যপণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা উৎপাদন সীমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে টানা তিন বছরের মতো সরবরাহ ও চাহিদায় এমন ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে। স্টোনেক্সের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে বিশ্ববাজারে চিনির ঘাটতি বেড়ে ১৮ লাখ টনে পৌঁছতে পারে।
এদিকে গত মাসে ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশন (আইএসও) এক পূর্বাভাসে জানায়, ২০২১-২২ মৌসুমে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির ঘাটতি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টনে দাঁড়াতে পারে।
প্রান্তিকভিত্তিক বাজার প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ২০২১-২২ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ১৭ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টন চিনি ব্যবহার হবে। এটি আগস্টে দেয়া পূর্বাভাসের তুলনায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার টন কম।
কারণ হিসেবে আইএসও বলছে, ভ্রমণের পরিমাণ কমে যাওয়া, স্থানীয় বাজারে প্রতিবন্ধকতা, ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয় চিনির বৈশ্বিক ব্যবহার কমে যাওয়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখছে।
স্টোনেক্স জানায়, চলতি মৌসুমে চিনির বৈশ্বিক উৎপাদন ১৮ কোটি ৬৬ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। পণ্যটির চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টনে। জাহাজের ভাড়াসহ অন্যান্য জাহাজীকরণ ব্যয় কমায় সম্প্রতি চাহিদা বেড়েছে। চলতি মৌসুমে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো এবং পরিশোধনের প্রধান কেন্দ্রগুলো থেকে চিনি ক্রয়ের পরিমাণ বাড়বে।
তথ্য বলছে, অনুকূল আবহাওয়ার সুবিধা নিয়ে ভারত রেকর্ড পরিমাণ আখ উৎপাদন করছে। কিন্তু ইথানল ব্লেডিং প্রোগামের কারণে এসব আখ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টনের সমপরিমাণ চিনি হারাবে বাজার। স্টোনেক্স বলছে, ইথানল উৎপাদন বাড়ায় গতবারের মতো চলতি মৌসুমেও ভারতের চিনি উৎপাদন অপরিবর্তিত থাকবে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩ কোটি ১০ লাখ টনে।
স্টোনেক্স আরো জানায়, ব্রাজিলে চলতি বছরের এপ্রিলে নতুন উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। এ মৌসুমে আখ উৎপাদন কিছুটা বাড়তে পারে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৫৬ কোটি ৫৩ লাখ টনে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশুগুলো এবং যুক্তরাজ্যে চলতি মৌসুমে চিনি উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা দেখছে স্টোনেক্স। এ অঞ্চলে উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ৭২ লাখ টনে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। অঞ্চলটিতে আখের তুলনায় বিটরুটের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি চিনি উৎপাদন হয়।
ব্রাজিলে চিনি উৎপাদন কমায় সার্বিক উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ভারত, রাশিয়া ও থাইল্যান্ড চিনি উৎপাদন বাড়ানোয় বাজারে কম প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু ইথানল উৎপাদনে আখের ব্যবহার বাড়ায় আবারো উদ্বেগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।