বিল ডাকাতিয়ায় মাছ চাষিদের ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি

স্টাফ রিপোর্টার

সাম্প্রতিক কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণে খুলনার ডুমুরিয়া এবং ফুলতলা উপজেলা অংশের বিল ডাকাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সোয়া তিন হাজার হেক্টর জমির ৮ হাজার ২৫০টি মাছের ঘের, ক্ষেতের ফসল, কয়েক হাজার বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিল ডাকাতিয়ার প্রান্তিক মাছ চাষিরা। ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় কপাল পুড়েছে বিল ডাকাতিয়ার মাছ চাষিদের।

বিল ডাকাতিয়া তেলিগাতী মৌজার অন্যতম মাছ চাষি মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, এ বছর বিল ডাকাতিয়ায় আমরা যারা মাছ চাষ করেছি তাদের কপাল পুড়েছে। আমার নিজের ১৩০ একরের ৬টা ঘেরের মধ্যে ৪টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে প্রায় ৮ কোটি টাকার মাছ। বাকি দুইটা ঘের পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে নেট জাল দিয়ে ব্যাড় দিয়ে কোনমতে টিকিয়ে রেখেছি। শুধু আমার নয় এ বছর বিল ডাকাতিয়ার সব মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। শত কোটি টাকার উপরে মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এ এলাকার মাছ চাষিরা সবাই দুশ্চিন্তায় আছে। কিভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিবে জানে না অনেকেই। সরকারিভাবে আমাদের খোঁজ কেউ নেয়নি।

ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ডুমুরিয়াা উপজেলার বিল ডাকাতিয়ার ৩ হাজার ৩৬ হেক্টর জমির সাড়ে ৭ হাজার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে ঘেরের মূল্যবান চিংড়ি এবং সাদা মাছ। বিল ডাকাতিয়ার ডুমুরিয়া অংশে সব মিলিয়ে মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৪৫ কোটি টাকা হবে।

এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণে বিল ডাকাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কৃষি নির্ভর ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়া অধ্যুষিত রংপুর, গুটুদিয়া, রঘুনাথপুর, ধামালিয়া ইউনিয়নে ধান এবং সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিল ডাকাতিয়া অংশে কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩৫ কোটি টাকার মতো হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের একটাই দাবি আমাদের ক্ষেতের পানি সরানোর ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে কৃষি অফিসে কোন সেচ যন্ত্র সরবরাহ নেই। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষকদের সেচ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে তাদের কোনো অফিস নেই। জেলা পর্যায়ের অফিস থেকে উপজেলা পর্যায়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। উপজেলা পর্যায়ে বিএডিসির কার্যক্রম থাকলে প্রান্তিক কৃষকরা আরো উপকৃত হতেন। সেচের ব্যবস্থা করতে না পারলেও আমরা প্রান্তিক কৃষকদের ক্ষেতের পানি সরে যাওয়ার পর করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করছি।

ফুলতলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য সম্প্রসারণ অফিসার মো. সেলিম সুলতান বলেন, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে ফুলতলা উপজেলার বিল ডাকাতিয়া অংশে ৭১৫ হেক্টর জমির সাড়ে ৭শ মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে এ সকল ঘেরের চিংড়ি এবং সাদা মাছ। ফুলতলার ডুমুরিয়া অংশে সব মিলিয়ে মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক সারে ৫ কোটি টাকার উপরে।

তিনি বলেন, ভারী বর্ষণের পূর্বে আমরা চাষিদেরকে ঘেরগুলো নেট জাল দিয়ে ঘিরে রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করি। ইতিমধ্যে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার কারণে যে সকল মাছ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ প্রাথমিকভাবে শুরু করেছি, ভবিষ্যতে সরকারি কোনো সহায়তা প্রদান করা হলে তালিকা উপজেলা কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোসা. রাজিয়া সুলতানা বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ফুলতলা উপজেলার বিল ডাকাতিয়া অংশে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ধান এবং বিভিন্ন ধরের সবজি। এ এলাকার ১৫০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হেক্টর জমির ধান এবং বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *