‘বিমা খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে আইডিআরএ ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে’

স্টাফ রিপোর্টার

বিমা খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান।

তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য দেশের বিমা খাতকে কার্যকর ও দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহায়ক ও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান ও বিমার আওতা বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার মাধ্যমে সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।

রোববার (১৬ জুলাই) রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে আয়োজিত জেনিথ ইসলাম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অর্ধ-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেলে জেনিথ লাইফ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুন্নাহার লাইলী।

আইডিআরএ সদস্য কামরুল হাসান বলেন, বিমা খাতের উন্নয়ন ও প্রসারের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিমা কোম্পানিতে যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে ১ মার্চকে ‘জাতীয় বিমা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বিমা মেলার আয়োজন হচ্ছে।

তিনি জানান, বিভিন্ন আইন, বিধি-বিধান ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কর্তৃপক্ষের কঠোর মনিটরিংয়ের ফলে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিমা দাবি পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত ও নির্ভুল সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ইউনিফায়েড মেসেজিং প্ল্যাটফরম-ইউএমপি চালু করা হয়েছে।

সম্মেলনে উপস্থিত বিমাকর্মীদের উদ্দেশে কামরুল হাসান বলেন, আপনারা সবাই জানেন জীবন বিমা একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা, যা সমাজের অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এটি মানুষের জীবনের জন্যও একটি বিশ্বাসযোগ্য সম্পদ। আপনারা জনমানুষের পাশে থেকে তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শ্রম দিয়ে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, আপনাদের কাজের মাধ্যমে পরিকল্পনা করা হয় যেন মানুষের পরিবার সুরক্ষিত থাকে এবং তাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। জীবন বিমা কর্মীরা পেশাদারত্ব ও দায়িত্বপূর্ণ কাজের কারণে তাদের যোগ্যতা দিয়ে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ কোম্পানিগুলোতে কাজ করছে। আপনাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ অত্যন্ত সৌভাগ্যের।

তিনি বলেন, আপনারা এই অর্ধ-বার্ষিক সম্মেলনে এসেছেন, মনে রাখতে হবে আপনাদের প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে আপনাদের ওপর ভরসা করেছে এবং আপনাদের সেবার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের জীবন এবং পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে। তাই সর্বদা উন্নত ও দ্রুত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে হবে।

আইডিআরএ সদস্য কামরুল হাসান বলেন, চতুর্থ প্রজন্মের জীবন বিমা কোম্পানি হিসেবে জেনিথ ইসলামী লাইফ নিয়মিত দাবি পরিশোধ করে আসছে। আমি জেনেছি, আপনারা বিভিন্ন প্রকার বিমা দাবি বাবদ প্রায় ১৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও আনন্দদায়ক। আপনাদের লাইফ ফান্ডও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তবে লাইফ ফান্ড আরও বাড়াতে হবে, যেন মেয়াদান্তে আকর্ষণীয় মুনাফাসহ গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া যায়। এ লক্ষ্যে আপনাদের নবায়ন আদায় হার ৭০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, আপামর জনসাধারণের জন্য বিমার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নয়নের মহীসোপানে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এ অগ্রযাত্রায় বিমার প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য।

ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কঠোর মনিটরিংয়ের ফলে গ্রাহক ভোগান্তি আগের চেয়ে বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। কোম্পানিগুলো এখন নিয়মিত দাবি পরিশোধ করছে। ফলে বিমার প্রতি গ্রাহক আস্থা আগের চেয়ে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ৩৫টি জীবন বিমা কোম্পানি কাজ করছে। এরমধ্যে যারা সর্বোত্তম সেবা দিতে পারবে তারাই এগিয়ে যাবে। সর্বদা গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে আমরা দ্রুত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত এবং বিমা দাবি পরিশোধ করে এরই মধ্যে গ্রাহকের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি।

বেকারত্ব দূরীকরণে বিমার গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, মানুষের কল্যাণের জন্য আমরা কাজ করছি। এতিম ও বিধবাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি।

বিমাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মিথ্যা কথা বলে বা প্রতারণা করে কোনো বিমা পলিসি বিক্রি করবেন না। বিমা পলিসি চালাতে পারবে না বা নবায়ন আসবে না, এমন কাউকে বিমা পলিসি করাবেন না। মনে রাখবেন, একটি ভালো পলিসি আপনাকে নতুন আরেকটি পলিসি সংগ্রহে সহায়তা করবে।

এস এম নুরুজ্জামান বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, আমরা জেনিথ ইসলামী লাইফ এ পর্যন্ত ১৮ কোটি ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৩১ টাকা বিমা দাবি পরিশোধ করেছি। বর্তমানে আমাদের হাতে কোনো বিমা দাবি পেন্ডিং নেই। আমাদের কোম্পানির প্রায় ৩০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। বর্তমানে আমাদের লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১৮০টি মৃত্যুদাবি বাবদ ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা, ৩ হাজার ৫৪৫টি এসবি বাবদ ১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ৭৭৮টি স্বাস্থ্য বিমা বাবদ ৭১ লাখ ১২ হাজার টাকা, ম্যাচিউরিটির ২৭টি বিমা দাবি বাবদ ৫৮ লাখ টাকা এবং ১৪৪টি সারেন্ডারে ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। এছাড়াও ৪১টি পলিসি লোন দেওয়া হয়েছে, যার পরিমাণ ২১ লাখ টাকা।

জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী বলেন, আমাদের কোম্পানির ৯০ শতাংশ কার্যক্রম ইআরপি সল্যুশনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের কার্যক্রমের ৯৯ শতাংশই পেপারলেস করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। বিমা আইনে ৯০ দিন থাকলেও আমরা ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বিমা দাবি পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সক্ষমতা আছে বলেই বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর গ্রুপ জীবন ও স্বাস্থ্য বিমা সেবা দিয়ে আসছি। এরই মধ্যে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অন্যতম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *