বিপৎসীমার ওপরে তিস্তা ব্রহ্মপুত্রের পানি

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে গাইবান্ধার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এর আগে শনিবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হচ্ছিল যা মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রোববার সকালে প্রায় তিন গুণ বেড়ে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়া ও যমুনা নদীর পানি যেকোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে ত্রাণসামগ্রী।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ও টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বাড়ার ফলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীবেষ্টিত ফুলছড়ির উড়িয়া, উদাখালী, এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর, গজারিয়া ও ফুলছড়ি; সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর; সদরের মোল্লারচর ও কামারজানী এবং সাঘাটার ভরতখালী, সাঘাটা, হলদিয়া, জুমারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, পাটক্ষেত, ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলি জমি। এসব এলাকার মানুষ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। অব্যাহতভাবে পানি বাড়ার কারণে জেলার চার উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার পরিবারের বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়েছে।

সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ জানান, বন্যার পানিতে চলাচলের রাস্তা ডুবে গেছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও হুমকির মুখে পড়বে।

ফুলছড়ি উপজেলা গজারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মকবুল হোসেন জানান, আদর্শ গুচ্ছগ্রামটি থেকে এখর আর নৌকা ছাড়া যাতায়াত করা যায় না। এই গ্রাম থেকে ফুলছড়ি বাজারে আসতে যে রাস্তাটি করা হয়েছিল তা স্রোতের তোড়ে বিলিন হওয়ার পথে। কয়েকটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জ্বল কুমার ঘোষ জানান, বন্যাকবলিত এলাকা পারিদর্শন চলছে। কোথাও তেমন কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন  বলেন, ‘গাইবান্ধার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ার ফলে চরাঞ্চলের কিছু কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবার ও মানুষের সংখ্যা নির্ধারণ কাজ চলছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের বন্যাকবলিত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *