বিদ্যুৎ-গ্যাসের উৎপাদন খরচ ব্যবসায়ীদের দিতে হবেঃ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

ক্রয় বা উৎপাদন খরচের সঙ্গে মিল রেখেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম ব্যবসায়ীদের দিতে হবে বলে বলেছেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ আর গ্যাস এটা যদি একেবারে নিরবচ্ছিন্ন চান তবে এগুলো কিনতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে সেই দামটা দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেয়া যাবে। কারণ ভর্তুকি তো জনগণের পয়সা, এত বেশি দেয়া যায় না। কাজেই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের এ বিষয়ে অন্তত একটু নজর দিতে হবে। গতকাল বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈশ্বিক মন্দার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বিদেশে আমাদের সব দূতাবাসে বলে দিয়েছি এখনকার ডিপ্লোম্যাসি পলিটিক্যাল না, ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি হবে। অর্থাৎ প্রত্যেকটা দূতাবাস ব্যবসা-বাণিজ্য রফতানি কোন দেশে কিসের চাহিদা বেশি, কী আমরা রফতানি করতে পারি বা কোত্থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের রফতানিযোগ্য পণ্য খুব সীমিত। কিছু পণ্যের ওপর আমরা খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এটা বহুমুখী করার কথা। আমি বারবার এ কথা বলে যাচ্ছি। বহুমুখী করা এবং আমরা যত বেশি বাজার পাব তত বেশি আমরা পণ্য রফতানি করতে পারব। বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী—এ কথা আদিকাল থেকে শুনে আসছি। সেটাই আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের কর্মক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা আমাদের প্রায় প্রত্যেকটা মিশনে বাণিজ্যিক উইং খুলে দিয়েছি, যাতে আমাদের বাণিজ্য আরো বাড়তে পারে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা ফাইভজি চালু করব। এটা সব জায়গায় দরকার নেই, এটা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য বা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রযোজ্য। সেভাবে আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি। সেবা খাতে বিশেষ করে আইটি ও আইটি এন্যাবল সার্ভিসের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গত অর্থবছরে এ খাতে রফতানি আয় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।’

ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য রেখে সড়ক-নৌ-রেল ও বিমানপথের উন্নয়ন করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতু নির্মাণে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। এসেছি জনগণের ভাগ্য গড়তে। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে, সেই শোকব্যথা বুকে নিয়ে এ রাষ্ট্র পরিচালনা করে মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, সেটা হলো বাস্তবতা। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি, এখন আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের সব মানুষের জীবনমান উন্নত হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা ইন্ডাস্ট্রি করবেন অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে। তার বাইরে করলে কোনো ধরনের সেবা পাবেন না। যেহেতু বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা এবং পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, আমি মনে করি—বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ আছে। আপনারা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলেন। তাতে আমাদের দেশীয় উৎপাদকরা যেমন লাভবান হবেন, কর্মসংস্থান হবে, পাশাপাশি রফতানির জন্য নতুন পণ্য হবে।’

অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দেয়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কভিডের পর এল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন, যার কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা। অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে। নিজেদের মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা করছে। আমরা কিন্তু বাংলাদেশ, এখনো সেই পর্যায়ে যাইনি। আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি। সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত যারা তাদের ডেকে সেভাবেই ব্রিফ করেছি, বলেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও বলা হয়েছে, প্রত্যেক দূতাবাস সেই চেষ্টা করবে। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সেটা আমরা আমাদের দেশে উৎপাদন ও রফতানি করব। এভাবেই আমরা আমাদের বাণিজ্য বৃদ্ধি করব।’

পরবর্তী লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশটাকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। ২০০৭ সালে যখন জেলে ছিলাম, তখন ওখানে লিখে রেখেছিলাম ২০২১ সালে কী কী করব। ’২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কীভাবে উন্নত করব। ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে সেটাকে সংযুক্ত করে আরো উন্নত মানের করে সেই টার্গেট অর্জন করেছি। এখন লক্ষ্য ২০৪১ সাল। ’৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশ শুধু মুখে বলা না, যেমন স্যাটেলাইট-১ উেক্ষপণ করেছি। দ্বিতীয়টি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রত্যেকেই ডিজিটাল ডিভাইসে দক্ষ হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট বিজনেস, স্মার্ট হেলথ, স্মার্ট এডুকেশন। আমাদের গভর্ন্যান্স হবে স্মার্ট গভর্ন্যান্স। এভাবেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *