বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা আসছে

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার। বিদ্যুতের পাইকারি দাম ঘোষণা সংক্রান্ত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জালিল জানান, বিদ্যুতের পাইকারি দাম আগেরটাই বহাল রাখা হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ছে না।

তবে সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল আরও বলেন, পিডিবি যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা অস্পষ্ট ছিল। তবে আজকের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে তারা রিভিউ আবেদন করতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদেরও নিজেদের সব তথ্য স্পষ্ট ও নতুন করে উত্থাপন করে রিভিউ আবেদন করতে হবে। তারপর আইন যা বলে আমরা সেটিই করবো। এ নিয়ে আরেকটি গণশুনানিও হতে পারে বা সরাসরি বিবেচনায়ও আনা যেতে পারে।

প্রায় ৫ সপ্তাহ পর আজ (২১ নভেম্বর) ফের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বিইআরসি। জানা গেছে, আজ ঘোষণা আসবে দাম বাড়ানোর।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ যখন দিশেহারা, ঠিক সেই মুহূর্তে পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। এ খবরে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরি করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। এছাড়া পিডিবির লোকসানের পরিমাণও চলে যাচ্ছিল সীমার বাইরে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়তে পারে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) গত ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৬৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদন করে। ১৮ মে তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। শুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে। প্রায় ৫ মাস পর গত ১৩ অক্টোবর বিইআরসি জানায়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় পিডিবির আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

এরপর গত ২ নভেম্বর পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ৬ নভেম্বর বিইআরসির সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা সফরকারী আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এ সময় বিদ্যুতের দাম, ভর্তুকি ও পিডিবির লোকসান নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর কমিশনের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে পিডিবি। সংস্থাটির আবেদন বিবেচনায় নিয়ে নতুন আদেশ দিতে যাচ্ছে কমিশন।

এ বিষয়ে বিইআরসি সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান বলেন, যেসব ঘাটতির কারণে পিডিবির প্রস্তাব নাকচ হয়েছিল, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করেছে পিডিবি। বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তবে পিডিবি যতটুকু চেয়েছে তত বাড়বে না।

এদিকে পাইকারিতে দাম বাড়ানো হচ্ছে- এমন খবরে বিতরণ কোম্পানিগুলোও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন তৈরি করছে। পাইকারি বিদ্যুতের দর কতটুকু বাড়বে, তা ধরেই গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে ৬ বিতরণ কোম্পানি। এসব প্রস্তাবের ওপর শুনানি করে নতুন মূল্য ঘোষণা করবে বিইআরসি।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, পাইকারি মূল্য যে হারে বাড়বে, সে অনুসারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে। এ বিষয়ে কাজ চলছে।

বিইআরসি সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবির ১৪-১৫ টাকা খরচ হচ্ছে। তাই দিন দিন লোকসান বাড়ছে সংস্থাটির। পিডিবি জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের লোকসান ছিল ১১ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় লোকসান। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) লোকসানের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *