বিদেশী ব্যাংকগুলোর সাফল্যের ‘মরূদ্যান’ ভারত

গত এক দশকের মধ্যে বাজার থেকে সামান্য রিটার্ন পেয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। ব্যাপক সম্ভাবনাময় কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম প্রণোদনা পাওয়া বাজারটিতে আরো বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে সিটিগ্রুপ, ডয়েচে ব্যাংক ও এইচএসবিসির মতো বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। খবর রয়টার্স।

নিয়ন্ত্রণ শিথিল ও অনলাইন ব্যাংকের ব্যাপ্তি এ পরিবর্তন ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ ব্যাংকাররা। স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকে গ্রাহকদের জয় করে নিতে বেশকিছু বিদেশী ঋণদাতাকে ভারতের বাজারে বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাড়াতে দেখা যাচ্ছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পারফরম্যান্সের উন্নয়ন ও ডিজিটাল খুচরা ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণে দেশটির ভিত চীনের মতো অন্যান্য বড় বাজারকে আশা দেখাতে পারে, বিশেষ করে যেসব বাজারে যেগুলো ব্যাপক সম্ভাবনার তুলনায় সামান্য মুনাফা উৎপাদন করছে।

আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ডিলয়েট ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা সঞ্জয় দত্ত বলেন, শক্তিশালী লেনদেন ব্যাংকিং ও দ্রুতগতির খুচরা ব্যাংকিং পরিস্থিতি বহু বিদেশী ব্যাংক এ মুহূর্তে ভারতের দিকে মনোযোগ বাড়াচ্ছে এবং এখানে ভালো পারফরম্যান্সেরও দেখা পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকগুলোর কেবল দ্বিতীয় সারির শহরগুলোয় সম্প্রসারণের পরিকল্পনা কিছু চ্যালেঞ্জ হাজির করলেও সামগ্রিকভাবে আসন্ন কোনো চ্যালেঞ্জ না থাকায় (ব্যাংকিং শিল্পে) ভারতে বিদেশী ব্যাংকগুলোর বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি মূল চাবিকাঠি বলে উল্লেখ করেছেন দত্ত।

বৃহদায়তন অর্থনীতি ও মধ্যবিত্তের ক্রমবর্ধমান আয়ের আকর্ষণে ভারতে তিন ডজনের বেশি বিদেশী ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান কয়েক দশক ধরে বড় বাজার অংশীদারিত্ব পাওয়ার আশায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ভারতের মোট ব্যাংকিং সম্পদে প্রতিষ্ঠানগুলোর মাত্র ৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে।

প্রযুক্তিগত আর্থিক সেবা এগিয়ে নিতে নিয়ন্ত্রণ শিথিলের পদক্ষেপ ভারতের ব্যাংকিং খাতের সর্বশেষ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও অর্থ স্থানান্তরে ডিজিটাল পদ্ধতি অবলম্বনের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়া সরকারের নগদ অর্থ ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের প্রচেষ্টার কারণে ভারতে ডিজিটাল পেমেন্টের মতো সেবা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। আর এ ধরনের উন্নয়নের সুবিধা নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে বিদেশী ব্যাংকগুলোর বার্ষিক রিটার্ন অন ইকুইটির (আরওই) পরিমাণ বেড়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এক বছর আগে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্থানীয় বেসরকারি ঋণদাতাগুলোর ষাণ্মাসিক ৬ দশমিক ১ শতাংশ অর্জনকে টপকে গেলো বিদেশী ব্যাংকগুলো।

বিদেশী ব্যাংকগুলো যখন ভারতের বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে, সে সময় স্থানীয় বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট ব্যাংকগুলো মন্দ ঋণ, স্বল্প পুঁজি ও নিয়ন্ত্রণ ইস্যু নিয়ে ক্রমাগত জর্জরিত হয়ে পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে একটি আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অশ্বিন পারেখ বলেন, মূলধন সীমাবদ্ধতা ও সমন্বয়ের দিকে মনোযোগ বাড়ানোয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ক্রমাগত বাজার অংশীদারিত্ব হারাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী পাঁচ বছর আরো সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পাবে।

ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, ভারতে বিদেশী ঋণদাতাদের সাফল্যের প্রকৃত চালিকাশক্তি হলো দ্রুত প্রযুক্তি গ্রহণ (অর্থ পরিশোধ, গ্রাহক সংগ্রহ ও পণ্য বিক্রিতে)।

এইচএসবিসির ভারতীয় খুচরা ব্যাংকিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান রামাকৃষ্ণান বলেন, বাজারে আরো একটু সমতা এসেছে এবং প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল কৌশল ও ডিজিটাল সক্ষমতার ওপর সাফল্য নির্ভর করছে।

গত বছর ভারতে এইচএসবিসির খুচরা ব্যাংকিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর-পূর্ববর্তী মুনাফা দ্বিগুণ বেড়ে রেকর্ড ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। যেখানে চীনে ব্যাংকটি ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার ক্ষতির শিকার হয়েছে।

ভারতের বাজারে সাফল্য অর্জন করেছে ডয়েচে ব্যাংক। পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী ১৮ হাজার কমী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছিল ব্যাংকটি। দুই বছর আগে এ বাজার থেকে সরে যাওয়ার চিন্তা করলেও এখন ভারতকে ‘মরূদ্যান’ বলে মনে করছে জার্মান ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *