বাড়তি দামেই চিনি বিক্রি করছেন মিল মালিকরা

স্টাফ রিপোর্টার

বেসরকারি পরিশোধন কোম্পানিগুলো খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে প্রায় দেড় মাস আগে। ওই প্রস্তাবে এখনো সাড়া দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রস্তাবের পর পরই পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম বেড়ে যায়। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে এখনো ঊর্ধ্বমুখী পণ্যটির দাম।

দেশে নিত্যপণ্যের মধ্যে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানিকারকরা প্রস্তাব করলে সেটি পর্যালোচনা করে একটি দাম ঘোষণা করে। আমদানিকারকরা প্রস্তাব দিলেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ে। প্রস্তাবের প্রায় দেড় মাস সময় পেরুলেও সরকারিভাবে দাম পুনর্নির্ধারণের কোনো ঘোষণা আসেনি। ফলে বর্ধিত দামেই লেনদেন হচ্ছে চিনি। সরকার দাম না বাড়ালেও আমদানিকারকরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে চিনি বিক্রি করছেন। ফলে প্রস্তাবিত দামের মতোই বাড়তি দামে লেনদেন হচ্ছে ভোগ্যপণ্যটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চিনি ডিলার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘‌চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের পর সিদ্ধান্ত না দিয়েই ফেলে রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমেছে। যার কারণে দাম না বাড়ালে সরকারিভাবে ঘোষণা দেয়া উচিত। কারণ এ সুযোগে মিল মালিকরা প্রস্তাবিত দামের মতোই পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে চিনি বিক্রি করছে।’

জানা গেছে, দেড় মাস আগে পাইকারি বাজারে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনির দাম ছিল ৪ হাজার ৪০০ থেকে ৪ হাজার ৪২০ টাকা। ওই সময় সরকারিভাবে নির্ধারিত খোলা চিনির দাম ছিল কেজিপ্রতি ১১৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত ১২৫ টাকা। ৫ জুন বেসরকারি মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এতে খোলা চিনির দাম ধরা হয় কেজিপ্রতি ১৪০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির ১৫০ টাকা। ওই খবরে সারা দেশের পাইকারি বাজারে চিনির দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে মণপ্রতি প্রায় ৪০০ টাকা বেড়ে যায়। বর্তমানে দাম কিছুটা কমে ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার ৭২০ টাকায় নামলেও তা পূববর্তী দামের চেয়ে মণপ্রতি প্রায় ৩০০ টাকা বেশি।

এদিকে চিনিকল মালিকরা ট্যারিফ কমিশনকে অগ্রাহ্য করে নিজেরাই দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)। গত ২০ জুন দেয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, চিনিকল মালিকদের এ সিদ্ধান্ত কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) অযৌক্তিক ও অন্যায় বলে মনে করে। ক্যাব এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার মিল মালিকদের প্রস্তাব না রাখলেও মিল মালিকদের কোনো ক্ষতি নেই। কারণ পাইকারি বাজারে চিনির এসও (সরবরাহ আদেশ) কিংবা প্রস্তুত চিনির দাম মিল মালিকদের প্রস্তাবিত দামের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এক মাসে আগে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির বুকিং দর প্রতি পাউন্ড ২৭ সেন্টে উঠেছিল। তবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির বুকিং দর কমে ২৩ সেন্টে নেমে আসে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি পাউন্ড অপরিশোধিত চিনি লেনদেন হচ্ছে ২৩-২৪ সেন্টের মধ্যে। ফলে সরকারিভাবে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিতে বিলম্ব হচ্ছে। যদিও সরকারি ঘোষণা না আসায় ব্যবসায়ীরা প্রস্তাবিত দামেই মিলগেট থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে চিনি বিক্রি করছেন।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজারদর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়। সরকারিভাবে দাম ঘোষণা না হওয়ায় কোম্পানিগুলো প্রস্তাবিত দরেই খোলা চিনি বিক্রি করছে। ২০২২ সালের একই দিনে সারা দেশের মতো ঢাকায় চিনি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮২ টাকা কেজি দরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *