বাজার হিস্যা পুনরুদ্ধারে ব্যাপক মূল্যছাড় ইরানের
চীনে অপরিশোধিত জ্বালানি রফতানিতে বড় বাজার হিস্যা রয়েছে ইরানের। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া চীনের জ্বালানি তেলের বাজারে নিজেদের আধিপত্য বাড়িয়েছে। এতে পিছিয়ে পড়েছে ইরান। বাজার হিস্যা পুনরুদ্ধারে দেশটি জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে রাশিয়ার মতো ইরানও জ্বালানি তেল রফতানিতে ব্যাপক মূল্যছাড় দিচ্ছে। শিল্পসংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে স্ট্রেইট টাইমস।
এদিকে ইরান যদি চীনের বাজারে মূল্যছাড়ে জ্বালানি তেল বিক্রি করে তবে দেশটি বিপাকে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, ২০১৫ সালের পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির জ্বালানি তেল রফতানির ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি উঠে যেতে পারে। কিন্তু ইরান চীনের বাজারে মূল্যছাড়ে তেল বিক্রি করলে এ দুটি বিষয়ের কোনোটিই সফলতার মুখ দেখবে না।
স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার অফশোরে নোঙর করে রাখা জ্বালানি তেলের ট্যাংকার থেকে রাশিয়ার কার্গোগুলোয় ৫-৭ ডলার ছাড়ে তেল বিক্রি করতে ইচ্ছুক ইরান।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেপলারের প্রাক্কলন অনুযায়ী, পারস্য উপসাগর ও সিঙ্গাপুর উপকূলে প্রায় ৯ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল মজুদ করে রেখেছে ইরান। আর ভরটেক্সার প্রাক্কলন অনুযায়ী, মজুদের পরিমাণ ৫ থেকে ৭ কোটি ব্যারেল।
তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনে হামলা চালানোর প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে রাশিয়া। এর পর থেকে দেশটি জ্বালানি রফতানির বাজার বদলেছে। আগে রাশিয়া উত্তোলিত জ্বালানি তেলের সিংহভাগই ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত, কিন্তু নতুন পরিস্থিতিতে দেশটি বিকল্প বাজার হিসেবে এশিয়াকে বেছে নিয়েছে। যুদ্ধের পর থেকে দেশটি চীনে রেকর্ড পরিমাণ জ্বালানি তেল রফতানি করেছে। এর ফলে চীনে ইরানের বাজার হিস্যা কিংবা বাণিজ্য অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
রাশিয়া বর্তমানে চীনের শীর্ষ জ্বালানি তেল সরবরাহকারী দেশ। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সরবরাহের দিক থেকে সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। তবে এশিয়ায় সরবরাহের দিক থেকে রাশিয়া এখনো তৃতীয়। এক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
স্ট্রেইট টাইমসের দেয়া তথ্য মতে, আগস্টে রাশিয়া চীনে প্রতিদিন অন্তত ১৭ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল বিক্রি করেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটি চীনের জ্বালানি তেলের বাজার হিস্যার প্রায় ২০ শতাংশই নিজেদের করে নিয়েছে।
অন্যদিকে চীনের পরিশোধন প্রতিষ্ঠানগুলোও রুশ জ্বালানি তেলে বড় আকারের মূল্যছাড় সুবিধা নিতে আগ্রহী। ফলে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে চীনের বাজারে রুশ জ্বালানি তেলের সরবরাহ আরো ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। কারণ ওই সময় জি৭ভুক্ত দেশগুলো রুশ জ্বালানি তেলের ওপর মূল্যসীমা নির্ধারণ করে দেবে বলে জানা গেছে।
চীনের বাজারে রাশিয়ার এ আধিপত্য ইরানের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে এ কারণে জ্বালানি তেলের বাজারে আবারো পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে ইরান। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে জ্বালানি তেলে ব্যাপক মূল্যছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।