বাজার হারানোর শঙ্কায় ভারতীয় চা রফতানিকারকরা

আসছে নভেম্বরে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগেই দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশ ইরান থেকে জ্বালানি পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে কিংবা স্থগিত করেছে। তবে ভারত ইরানি জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষির ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা ইরানের সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে দিল্লি। তবে ভারতের জ্বালানি আমদানিকারকরা বিশেষ এ সুবিধা পেলেও তেহরানের ওপর কার্যকর হতে যাওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে পড়তে পারেন ভারতীয় চা রফতানিকারকরা। ভারত থেকে রফতানি হওয়া চায়ের অন্যতম গন্তব্য ইরান। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে চায়ের অন্যতম বড় এ রফতানি বাজার হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। খবর ইকোনমিক টাইমস ও বিজনেস লাইন।

ভারত থেকে রফতানি হওয়া চায়ের সবচেয়ে বড় বাজার রাশিয়া। তালিকায় এর পরই রয়েছে ইরান। টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (টিবিআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ২৪ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ চা রফতানি হয়েছে ইরানের বাজারে। এ সময় ইরানের বাজারে মোট ৭২ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারের চা রফতানি করেছে ভারতীয় রফতানিকারকরা। এক বছরের ব্যবধানে ইরানের বাজারে চা রফতানি বাবদ ভারতের আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ভারত থেকে দেশটিতে মূলত প্রচলিত জাতের চা রফতানি হয়। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ভারতীয় রফতানিকারকরা ইরানের বাজারে প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ কেজি চা রফতানি করেছে বলে জানিয়েছে টিবিআই।

মূলত ইরান থেকে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির বিপরীতে যে বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়, চা রফতানির মাধ্যমে তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

এ কারণে ভারতীয় চা রফতানিকারকদের কাছে ইরানের বাজার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভারত থেকে ইরানে চা রফতানির ক্ষেত্রে শঙ্কার জন্ম দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তেহরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় বিশ্বশক্তির পারমাণবিক চুক্তি বর্জন করেছেন ট্রাম্প। দেশটির বিরুদ্ধে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন, যা আসছে নভেম্বরের শুরুতে কার্যকর হবে।

এ বিষয়ে ভারতের চা উৎপাদনকারী ও রফতানিকারকদের জোট ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিএ) চেয়ারম্যান আজম মোমেন বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা নিয়ে আমরা (ভারতীয় চা উৎপাদনকারী ও রফতানিকারকরা) সন্দিহান। এ সময় ভারত থেকে ইরানের বাজারে সরাসরি চা রফতানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিংবা ইরানের বন্দরে ভারতীয় জাহাজ না ভিড়লে দুবাই কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশ হয়ে ইরানে চায়ের চালান পাঠাতে হতে পারে।

এর ফলে বাড়তি পরিবহন ব্যয় যুক্ত হয়ে পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে ইরান ইস্যুতে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তার কারণে মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে রুপির তুলনামূলক দুর্বল অবস্থান ভারতের চা রফতানি খাতের চ্যালেঞ্জ আরো বাড়িয়ে দেবে।

তবে বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, ইরানের জ্বালানি খাতকে টার্গেট করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। খাদ্য ও মানবিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি এর আওতার বাইরে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর ইরানের সঙ্গে ভারতের জ্বালানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে। চা রফতানি নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে কলকাতাভিত্তিক চা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এশিয়ান টি এক্সপোটার্স লিমিটেডের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের বন্দর আব্বাসে ভারতীয় রফতানিকারকদের প্রায় পাঁচশতাধিক কনটেইনার চা খালাসের অপেক্ষায় আটকে আছে। নভেম্বরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগে এসব চা খালাস না হলে ভারতীয় রফতানিকারকদের অর্থ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত এসব চা খালাস করে পাওনা পরিশোধের জন্য ইরানকে চাপ দিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *