বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৭ হাজার মৎস্য ঘের

স্টাফ রিপোর্টার

বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে ঘেরের মাছ। অতিরিক্ত পানিতে একাকার হয়ে গেছে খাল-নদী, মাঠ ‍ও মাছের ঘের। কোনো কোনো চাষী আবার নেট নিয়ে শেষ রক্ষার চেষ্টা করছেন। গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিরামহীন বৃষ্টিতে অন্তত ৭ হাজার ঘের ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এতে চাষীদের কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চিংড়ি সেক্টরকে টিকিয়ে রাখতে চাষীদের সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবারের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গলদা চিংড়ি উৎপাদনের অন্যতম এলাকা জেলার ফকিরহাট, চিতলমারী ও মোল্লাহাট উপজেলার চাষীরা। এর সঙ্গে মোংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার চাষীদের ক্ষতির পরিমাণও কম নয়। চাষীদের দাবি, কয়েকশ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে এই পানিতে।

ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা এলাকার কাজী মিরাজুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির পানিতে ঘের ডুবে একাকার হয়ে গেছে। ঘেরের পাড়ের ওপর হাটু পানি। নেট, কচুরিপানা ও ঘাষ দিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কতদূর আছে জানি না।

নুর মোহাম্মাদ নামের আরেক চাষী বলেন, এখন আসলে মাছ ধরার সময় আমাদের। কিন্তু হঠাৎ দূর্যোগ আমাদের পথে বসিয়ে গেল। আমার ৩টি ঘেরের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। ঘেরের পাড়ের সবজি গাছও মরে যাবে পানি টানার সঙ্গে সঙ্গে।

মোল্লাহাট উপজেলার কাহালপুর গ্রামের নাসির মিয়া বলেন, আমার ৫০ বিঘার তার দুটি ঘেরসহ আশপাশের সকলের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকার মানুষের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।

এদিকে ফকিরহাট, চিতলমারী ও মোল্লাহাটের বিভিন্ন এলাকায় খেওলা জাল দিয়ে পানিতে ভেসে যাওয়া মাছ ধরতে দেখা যায় স্থানীয়দের। প্রতিটি জালেই চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেল, মিনারকার্পসহ বিভিন্ন প্রকার চাষের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ থলে ভর্তি মাছ পেয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম গোরা।

সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, মাছ চাষীরা আর্থিকভাবে খুব বিপদে পড়েছেন। আমরা তাদের খোজ খবর নিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। এছাড়া যাদের ব্যাংক ঋণ আছে তাদের সুদ মওকুফ করতে হবে এবং এনজিওগুলো আপাতত কিস্তি নিতে পারবে না। যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন আবার ঋণের কিস্তি পরিশোধের পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে টাকার অংকে চাষীদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ না জানাতে পারলেও ক্ষতিগ্রস্তদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল। তিনি বলেন, প্রায় প্রতি বছরই বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে ঘেরের মাছ ভেসে যায়। আবার শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে মাছ মারা যায়। এই ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে বাঁচতে ঘেরের গভীরতা ও পাড়ের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টির পানি নেমে গেল চুন প্রয়োগ করে পরিমাণমত খাবার দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *