বাংলাদেশে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

স্টাফ রিপোর্টার

ভারতের সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। গতকাল শনিবার এ ঘোষণা আসার পরই বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। রাজধানী ঢাকায় মাত্র একদিনের ব্যবধানে এই নিত্যপণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

রোববার (২০ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা গত শনিবার ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাবে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দামও। বাজারে প্রতি কেজি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা একদিন আগেও ছিল ৮০ টাকার মধ্যে।

শুধু খুচরায় নয়, রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গতকাল শনিবার ওই বাজারে প্রতি কেজি আমদানির পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, যা রোববার সকালে বিক্রি হয়েছে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়। তবে সন্ধ্যা নাগাদ একই পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় ওঠতে দেখা গেছে। একই ভাবে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৮ টাকা বেড়ে এখন ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের শুল্ক আরোপের খবরের পর দেশের বন্দর এলাকায়ও পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। শুল্ক আরোপের পর নতুন দামে পেঁয়াজ আমদানি শুরু না হলেও যশোরে একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। আবার দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরে রোববার সকাল থেকে খাতুনগঞ্জের আড়তে কেজি প্রতি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে চাকতাই-খাতুনগঞ্জে আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এ কারণে সীমান্তে স্থলবন্দর এলাকায় দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে খাতুনগঞ্জে।

তবে ক্রেতারা বলছেন, শুল্ক আরোপের খবরে দেশের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৪০ শতাংশ শুল্কসহ এলসি করা পেঁয়াজ এখনো দেশে আসেনি। কিন্তু ভারত সরকারের এ ঘোষণার পরই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আগের দামে কেনা পেঁয়াজের দাম নতুন করে বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ করা হলেও ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম যেন হঠাৎ বেড়ে না যায়, সেজন্য দেশটি এ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ রোববার থেকে সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত শুল্ক আরোপ করলেও বাংলাদেশের বাজারে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। রোববার (২০ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে তুলা উন্নয়ন বোর্ড (সিডিবি) মিলনায়তনে এক বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছি। দেশে এসেছে মাত্র তিন লাখ টন। এর অর্থ হলো দেশেও পেঁয়াজ আছে। মাঠ পর্যায়েও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কৃষকদের কাছে এখনো তুলনামূলকভাবে পেঁয়াজের মজুত ভালোই আছে। কাজেই, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও দেশে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না। শুল্ক আরোপের ঘোষণায় এখন দাম কিছুটা বাড়লেও কদিনের মধ্যেই তা আবার কমে আসবে।

আরও পড়ুন: সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বাড়লো ১০-১৫ টাকা

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যে কোনো অজুহাতে পণ্যমূল্য বাড়ানোই ব্যবসায়ীদের প্রবণতা। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। কারণ, বাড়তি শুল্কায়নের পেঁয়াজ এখনো দেশে আসেনি। অথচ খবর শুনেই সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানো হলো। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর হতে হবে। সরকারের মাঠ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে। পণ্যটির বার্ষিক চাহিদা ২৮ লাখ টন অতিক্রম করে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৫ লাখ টন। তার আগের অর্থবছরে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ৩৪ লাখ টন। এরও আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে এ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ টন। অর্থাৎ, গত তিন অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে।

কৃষিখাত সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত কয়েক বছরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি মাঝেমধ্যেই অনিশ্চয়তার পড়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজ চাষে আরও বেশি জোর দেওয়া হয়। কয়েক বছর ধরেই পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ায় দেশের কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন। তাতে যেমন উৎপাদন বাড়ছে, ভোক্তার চাহিদাও মিটছে। এর ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমতে শুরু করেছে। তবে ব্যবসায়ীদের মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি। পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা শুল্কায়নের খবরে অনৈতিকভাবে দাম বাড়াচ্ছেন।

শ্যামবাজারে বিক্রমপুর পণ্য আড়তের খোকন ইসলাম বলেন, ভারতের শুল্ক আরোপের পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় বাজার চড়া হচ্ছে। সকাল থেকে বিকেলে আরেক দফা দাম বাড়িয়েছে আমদানিকারকরা। এখন পেঁয়াজের সংকটও তৈরি হচ্ছে। অনেক আড়তে পেঁয়াজ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *