বাঁচা-মরার লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা
২ বলে প্রয়োজন ছিল ৬ রান। ইসুরু উদানাকে ফ্লিক করে হাওয়ায় ভাসিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বল পাঠান বাউন্ডারির বাইরে। এক বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। গণ্ডগোল আর শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাটিতে হারিয়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত করে নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল।
আরও একবার এমন কঠিন সমীকরণের সামনে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষে সেই শ্রীলঙ্কা। তাদের বিপক্ষে জিতলে পরে এশিয়া কাপের সুপার ফোর নিশ্চিত। হারলে আগেভাগেই ধরতে হবে দেশের ফ্লাইট। বৃহস্পতিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা হলেই যেন তেঁতে ওঠে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে মুখোমুখি হওয়ার আগে দুই দলের কথার চালাচালি ছড়াচ্ছে উত্তেজনার রেণু। নিদাহাস ট্রফিতে সেই ম্যাচটির স্মৃতি এখনও দগদগে। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিশ্চিত নো বল না দেওয়ায় ক্রিকেটারদের মাঠ থেকে উঠে আসার সংকেত দেন। বারবার দুই দলের ক্রিকেটাররাও তেড়েফুঁড়ে আসতে দুইবার ভাবেনি।
এবারও দুই দলের ম্যাচের আগে কথার চালাচালিতে মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই ম্যাচকে। যদিও এশিয়া কাপের সঙ্গে ২০১৮ সালে হওয়া নিদাহাস ট্রফির তুলনা অবান্তর। স্বস্তির বিষয়, আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর ফুরফুরে মেজাজে আছে সাকিবের দল। বিসিবি সভাপতি হতে শুরু করে কোচিং প্যানেল সকলেই আছেন ক্রিকেটারদের পাশে। তাই তো লঙ্কাবধে দৃঢ় প্রত্যয়ী লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
আফগানিস্তান ম্যাচে হার নিয়ে খুব একটা শঙ্কিত না দল। তবে ভুল শুধরে নামতে প্রস্তুত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বাঁচা-মরার এই ম্যাচে বাংলাদেশ যেতে পারে পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। ওপেনিং হতে শুরু করে বোলিংয়ে; আসতে পারে বদল। তবে মুজিব-রশিদের মতো স্পিনার না থাকায় বাংলাদেশ যেন খুশি। টিম ডিরেক্টর সুজন বলেন, ‘আমি বলবো, রশিদ খান আর মুজিব উর রহমান যেরকম অভিজ্ঞতা বা যেরকম, সেটার সঙ্গে আমি ওদের মেলাতে চাই না। আমি মনে করি রশিদ, মুজিব এই সংস্করণে ওদের চেয়ে বেশি মানসম্পন্ন।’
বাংলাদেশ দলে আসতে পারে একাধিক পরিবর্তন। তবে একাদশ নির্ধারণ হবে উইকেট বিবেচনায় এনে। ওপেনিংয়ে দেখা যেতে পারে পারভেজ হোসেন ইমনকে। এ ছাড়া একেবারে নতুন ওপেনিং জুটিও হতে পারে। দেখা যেতে পারে সাব্বির রহমান-মেহেদী হাসান মিরাজকে। বোলিংয়ে আসতে পারেন নাসুম আহমেদ। তারা গতকাল ঐচ্ছিক অনুশীলনেও নেটে বেশকিছুক্ষণ ধরে ঘাম ঝরিয়েছেন।
আগের ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিং নিলেও এই ম্যাচে পরিস্থিতি বিবেচনায় রান তাড়া করতে পারে বাংলাদেশ। পরিকল্পনা সেই আগেরটাই। আগ্রাসী ক্রিকেট। এই খেলা খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হলেও সমস্যা নেই। তবে পুরোনো ধাঁচের ধীরগতির খেলা যাবে না। যেভাবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে ক্রিকেটারের প্রতি সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছে।
সুজনের ভাষ্য, ‘আমাদের টিম প্ল্যান যদি আমরা বলি, যে প্ল্যান নিয়ে আমরা এগোচ্ছিলাম এখনও আমরা সেটার বাইরে না। আমার মনে হয় না মাঠে আমরা সেভাবে প্রয়োগ করতে পারছি, ব্যাটিংয়ে তো অবশ্যই না। বিশেষ করে আমাদের ডেথ ওভারে যে পরিকল্পনাটা ছিল, সে পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি আসলে।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১২টি ম্যাচ খেলেছে। তাতে জয়ের পাল্লা ভারি লঙ্কানদেরই। তারা জিতেছে ৮টি আর বাংলাদেশ ৪টিতে। সবশেষ গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শারজায় হেরেছে ৫ উইকেটে। সবশেষ ৫ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় দুটিতে।
এদিকে শ্রীলঙ্কাও বেশ আত্মবিশ্বাসী এই ম্যাচ নিয়ে। অনুশীলনে তাদের দেখা গেছে বেশ ফুরফুরে। এর আগে অধিনায়ক দাসুন শানাকাতো বলেই দিয়েছেন বাংলাদেশ সহজ প্রতিপক্ষ। তবে লঙ্কান স্পিন কোচ পিয়াল ভিজেতুঙ্গে বেশ সমীহ করছেন বাংলাদেশ দলকে।
মাঠের লড়াইয়ে মানসিকভাবে যারা শক্ত থাকবে তারাই হাসবেন শেষ হাসি। টিম ডিরেক্টর সুজন তেমনটাই মনে করছেন। এর আগে নিদাহাস ট্রফিতে কলম্বোয় ডু অর ডাই ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে বাংলাদেশ। কলম্বোর সেই রাত কি ফিরবে দুবাইয়ে? টুর্নামেন্ট, পরিস্থিতি সবকিছু ভিন্ন। তবুও প্রতিপক্ষ লঙ্কা বলে বারবার যেন উঁকি দিচ্ছে সেই রাত।