বদলে গিয়েছে রুশদের ভ্রমণ গন্তব্য
একটা সময় পশ্চিম ইউরোপ রুশ পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য ছিল। তবে বর্তমানে এটি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। রুশরা এখন আর ইউরোপকে ছুটির গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করতেও পারছেন না। পরিবর্তে তারা মালদ্বীপ, সেশেলস ও তুরস্কের মতো দেশগুলোয় ভ্রমণ বাড়িয়েছেন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খবর সিএনবিসি।
৪০ বছর বয়সী রুশ পর্যটক ম্যাক্স ফ্রান্সের জাদুঘরে বেড়াতেন, ইতালির চমত্কার খাবার উপভোগ এবং স্পেনের পাহাড়ে হাইকিং করতে যেতেন। তবে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর তার গন্তব্য পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এ বছর তিনি তার নামের শেষ অংশ বলতেও অস্বস্তিতে ভোগার কথা জানান। তিনি বলেন, এ বছর আমি ইউরোপকে ছুটির গন্তব্য হিসেবে বিবেচনাও করিনি। কারণ ইউরোপীয় দেশগুলোয় ভিসা পেতে সমস্যাগুলো সম্পর্কে আমি অবগত আছি।
গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর সঙ্গে ২০০৭ সালের একটি ভ্রমণ চুক্তি স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে। ওই চুক্তির মাধ্যমে রুশদের ভিসা প্রদানে সুবিধা দেয়া হতো। তবে এমন পদক্ষেপের কারণে ২৭ দেশের ব্লকটিতে ভ্রমণ করা আরো কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে রুশ এয়ারলাইনসের জন্য ইইউর আকাশসীমা বন্ধ করাও ভ্রমণকে কঠিন করে তুলেছিল।
ম্যাক্স বলেন, আমি যুদ্ধ ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধী। কিন্তু ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমাকে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। ভবিষ্যতে পুতিন যখন ক্ষমতা ছাড়বেন তখন আমরা আবার একটি স্বাভাবিক দেশ হয়ে উঠব। আশা করি, আবার ইউরোপ সফর করতে পারব। আমি ইতালিকে খুব ভালোবাসি।
ম্যাক্স অনেক রুশদের মধ্যে একজন, যারা এ গ্রীষ্মকালীন ছুটির মৌসুমে ইউরোপীয় গন্তব্যগুলোয় ভ্রমণ করতে পারেননি। ভ্রমণ তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা ফরওয়ার্ডকিস অনুসারে, যুদ্ধের আগে ইতালি, স্পেন, সাইপ্রাস ও গ্রিসের মতো ইইউ দেশগুলো রুশ ভ্রমণকারীদের বুক করা শীর্ষ ২০ গন্তব্যগুলোর মধ্যে ছিল। সংস্থাটির ইনসাইটস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অলিভিয়ার পন্টি বলেন, চলতি গ্রীষ্মে ইউরোপে রুশদের উড়োজাহাজ ভ্রমণ ২০১৯ সালের তুলনায় ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ অবশ্যই দেশটির নাগরিকদের ছুটির পছন্দকে সীমিত করেছে। কারণ অনেক জনপ্রিয় গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে রুশদের পক্ষে এখনো ইউরোপে যাওয়া সম্ভব, তবে তাদের এখন ইস্তানবুল কিংবা দুবাইয়ের মতো জায়গায় উড়োজাহাজ পরিবর্তন করতে হবে।
এজন্য ইউরোপের বাইরে রুশদের ভ্রমণ বেড়েছে। ফরওয়ার্ডকিসের মতে, গত তিন মাসে বেশ কয়েকটি ছুটির গন্তব্যে ২০১৯ সালের তুলনায় রুশ পর্যটকের বাজারহিস্যা বেড়েছে। যেমন জুন, জুলাই ও আগস্টে ভ্রমণ করা মোট রুশ পর্যটকের ২০ শতাংশই পেয়েছে মালদ্বীপ। যেখানে ২০১৯ সালে দেশটির রুশ পর্যটক পাওয়ার হার ছিল ৫ শতাংশ। এছাড়া এ সময়ে রুশ পর্যটক প্রাপ্তিতে সেশেলসের বাজারহিস্যা ৩ থেকে ৭ শতাংশ, তুরস্কের ৪ থেকে ৮ শতাংশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১ থেকে ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ২০১৯ সালে তুরস্ক রুশ পর্যটকের জন্য শীর্ষ গন্তব্য ছিল। এর পরের অবস্থানে ছিল রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চল আবখাজিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালদ্বীপ। সংস্থাটির বিশ্লেষকরা বলেন, মালদ্বীপ দীর্ঘদিন ধরে ধনী রুশদের জন্য একটি পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে। তারা ৯০ দিন পর্যন্ত থাকার জন্য সহজেই পর্যটক ভিসা পেতে পারেন।
ইআইইউর বিশ্লেষক মারিও বিকারস্কি ও ফেদেরিকা রেসিয়া বলেন, মার্চের মাঝামাঝি থেকে তুরস্কের মুদ্রার রেকর্ড নিম্ন বিনিময় হার সম্ভবত দেশটিতে ভ্রমণকারীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। বর্তমানে ১ ডলারে ১৮ দশমিক ২৩ লিরা পাওয়া যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ৮০ শতাংশে থাকার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগস্টে সুদের হার কমানোর পর লিরার বিনিময় হার রেকর্ড নিম্নের কাছাকাছি চলে গিয়েছে।
তবে আগামীতে রুশদের ভ্রমণ প্রবণতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলেন, অর্থনৈতিক চাপ রুশদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে পারে। যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে অর্থনীতিতে তার প্রভাবও ব্যাপক হবে। এটি দেশটির নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।