ফ্লোর প্রাইসে আটকানো কোম্পানির সংখ্যা দুইশ ছাড়ালো
ক্রেতা সংকটের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান। ফলে দাম কমে প্রতিদিন নতুন নতুন কোম্পানি এসে ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) যুক্ত হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে ফ্লোর প্রাইসে আটকানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা।
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দাম কমে নতুন করে ফ্লোর প্রাইসে এসে ঠেকেছে ১৪ কোম্পানির শেয়ার। এতে ফ্লোর প্রাইসে আটকানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে প্রায় দুইশ ছাড়িয়ে গেছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে যাওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
প্রতিদিন দিনের সর্বনিম্ন দামে বা ফ্লোর প্রাইসে এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির আদেশ আসছে। বিপরীতে শূন্য পড়ে থাকছে ক্রয়াদেশের ঘর। ফলে যারা দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির চেষ্টা করছেন তাদের সিংহভাগ ব্যর্থ হচ্ছেন।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। লেনদেনের প্রথম আধাঘণ্টাজুড়েই সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। এতে একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
বেলা ১১টার পর থেকে বাজার চিত্র বদলে যেতে থাকে। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দরপতনের তালিকায় নাম লেখাতে থাকে। সেই সঙ্গে বড় হতে থাকে ফ্লোর প্রাইসে আটকানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেন অংশ নেওয়া ৮৩ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইস আটকে ছিল। দিনের লেনদেন শেষে সেই সংখ্যা বেড়ে দুইশ ছাড়িয়ে গেছে।
মূলত শেষ দুই ঘণ্টার লেনদেনে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন। এমনকি দিনের সর্বনিম্ন দামে বা ফ্লোর প্রাইসে দুইশরও বেশি প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির চাপ আসে। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের পতন দিয়ে শেষ হয় দিনের লেনদেন।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১১ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ২৩১ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২১৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৫৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
আর দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ৩১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০২টির এবং ২০১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম কমার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪টির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ কমে ফ্লোর প্রাইসে এসে ঠেকেছে। এতে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে ২০৯টিতে দাঁড়িয়েছে।
তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার দিনে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৫১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১১১ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমরা নেটওয়ার্কের ২৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পর্ল বিচ রিসোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে এডিএন টেলিকম, জেনেক্স ইনফোসিস, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, অলেম্পিক, বিডিকম অনলাইন, আরডি ফুড এবং ইস্টার্ন হাউজিং।
দেশের অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৪৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৮টির এবং ৮৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে সাত কোটি চার লাখ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় আট কোটি ১৩ লাখ টাকা।