ফের শীর্ষ স্বর্ণ উত্তোলক চীন

স্টাফ রিপোর্টার

বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে চলতি বছরের শুরুতে স্বর্ণ উত্তোলনে পিছিয়ে পড়ে নেতৃস্থানীয় দেশ চীন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে শীর্ষ স্বর্ণ উত্তোলনকারী দেশের মুকুট দখল করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। তবে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়িয়ে আবারো নিজেদের হারানো মর্যাদা ফিরে পেয়েছে চীন। স্বর্ণের বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সারবিটন অ্যাসোসিয়েটস এ তথ্য জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ২০০৭ সালের পর থেকে টানা ১৫ বছর বৈশ্বিক স্বর্ণ উত্তোলনে প্রথম স্থান দখল করেছিল চীন। অন্যদিকে প্রায় এক দশক ধরে দ্বিতীয় স্থান দখলে ছিল অস্ট্রেলিয়ার। সারবিটন অ্যাসোসিয়েটস জানায়, এ বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ১৫৩ টন স্বর্ণ উত্তোলন করে চীন। বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ১৫৭ টন। উত্তোলনের এমন ব্যবধান অস্ট্রেলিয়াকে শীর্ষস্থানে উঠে আসতে সহায়তা করে। কিন্তু চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে দেশটির স্বর্ণ উত্তোলন কমে যায়।

অস্ট্রেলীয় মাইনিং জার্নাল অস্ট্রেলিয়ান রিসোর্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট জানায়, প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বর্ণ উত্তোলন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে চীন। বছরের প্রথম নয় মাসে দেশটি সব মিলিয়ে ২৩৬ দশমিক ৭৫ টন স্বর্ণ উত্তোলন করে। একই সময় অস্ট্রেলিয়ায় উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩৪ টনে। তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটি উত্তোলন করে মাত্র ৭৭ টন, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।

সারবিটন অ্যাসোসিয়েটসের পরিচালক সান্ড্রা ক্লজ বলেন, চলতি বছরের প্রথমার্ধে প্রথমবারের মতো শীর্ষস্থানে উঠে আসে অস্ট্রেলিয়া। তবে অস্ট্রেলিয়ার উত্তোলন বৃদ্ধির কারণে চীন পিছিয়ে পড়েনি। আমি মনে করি, নিরাপত্তাজনিত কিছু কারণে চীনের স্বর্ণ উত্তোলন খনিগুলোয় প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। দুর্ঘটনায় কয়েকজন ব্যক্তি মারা যান। তবে সম্প্রতি বাধা কাটিয়ে মূল্যবান ধাতুটি উত্তোলনে শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় প্রথম স্থান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে চীন। যদিও বছরের শেষ পর্যন্ত দেশ দুটির মধ্যে প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরো বলেন, বছর শেষে কার মাথায় উঠবে শীর্ষ উত্তোলনকারীর মুকুট, তা নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। ২০০৭ সাল থেকেই চীন স্বর্ণ উত্তোলনে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে। অস্ট্রেলিয়া জায়গাটি দখল করতে প্রতিনিয়তই চীনের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। তবে সম্পূর্ণ বিষয়টিই নির্ভর করছে চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের উত্তোলন পরিস্থিতির ওপর।

এদিকে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) জানায়, গত বছর মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা কমে ১১ বছরের সর্বনিম্নে নেমে গেলেও এ বছর চাহিদা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

করোনা মহামারীর ধাক্কায় গত বছর বৈশ্বিক স্বর্ণ উত্তোলন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। লকডাউন ও বিধিনিষেধের কারণে ১৮ মাস ধরে বিশ্বের খনিগুলোয় মূল্যবান ধাতুটির উত্তোলন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। তবে ধীরে ধীরে খাতটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছর উত্তোলনে বড় প্রবৃদ্ধি আসবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিচ সলিউশনের কান্ট্রি রিস্ক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মহামারীর প্রভাব কমতে শুরু করায় চলতি বছর বিশ্বজুড়ে স্বর্ণ উত্তোলন ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত স্বর্ণের বৈশ্বিক উত্তোলনে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত মূল্যবান ধাতুটির উত্তোলন বাড়বে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০২৪ সালে ২ দশমিক ৪ ও ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসবে খাতটিতে। গবেষকরা জানান, চলতি বছর স্বর্ণের বৈশ্বিক উত্তোলন ১০ কোটি ৯৪ লাখ থেকে বেড়ে ১৪ কোটি ১৭ লাখ আউন্সে পৌঁছবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *