ফেব্রুয়ারিতে চীনে ভোক্তা মূল্যসূচক ৫.২% বেড়েছে

খাদ্যপণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের মূল্যস্ফীতি আট বছরের সর্বোচ্চের কাছাকাছি পৌঁছে। গতকাল চীনের সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। খবর এএফপি ও সিনহুয়া।

ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের (এনবিএস) পরিসংখ্যান অনুসারে, গত মাসে চীনের প্রধান মূল্যস্ফীতি পরিমাপক ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) আগের বছরে একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; যা আগের মাসের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে সামান্য কম। তবে ফেব্রুয়ারিতে দেশটির মূল্যস্ফীতি ব্লুমবার্গ পরিচালিত জরিপে করা পূর্বাভাসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে চীনের মূল্যস্ফীতি ২০১১ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।

শূকরের মাংসসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটির মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে। গত মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ, এর মধ্যে শূকরের মাংসের দাম বেড়েছে ১৩৫ শতাংশ। এর আগে জানুয়ারিতে ১১৬ শতাংশ দাম বাড়তে দেখা যায়। মূলত আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লুর কারণে চীনে কয়েক লাখ শূকর নিধন করার ফলে পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।

এদিকে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় দেশজুড়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে প্রধান প্রধান পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায় মূল্যস্ফীতি আরো কিছুদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এছাড়া দেশটির কারখানা পর্যায়ের মূল্যে পতন ঘটেছে এবং ভাইরাসের বিস্তারে চীনা পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উৎপাদন মূল্য আরো হ্রাস পেতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেছেন।

এনবিএসের নগর বিভাগের পরিচালক ঝাও মাওহং বলেন, আকস্মিক নভেল করোনাভাইরাস মহামারী ফেব্রুয়ারির মূল্য গতিশীলতার ওপর আরো জটিল প্রভাব ফেলেছে।

সংক্রমণ এড়াতে চান্দ্র নববর্ষের বর্ধিত ছুটির মধ্যে জনগণকে ঘরে থাকতেই উৎসাহিত করে চীন। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও কার্যক্রম স্থগিত রাখে। শহরগুলোও প্রায় সব ধরনের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

নমুরার চীন-বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ লু তিং বলেন, সাধারণত চান্দ্র নববর্ষের ছুটির পর বছরওয়ারি কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) মূল্যস্ফীতি প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পায়। সে তুলনায় এবার ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি বেশ অস্বাভাবিক। তিনি আরো বলেন, সরবরাহ সংকট স্বল্পমেয়াদে সিপিআই মূল্যস্ফীতিকে প্রভাবিত করতে পারে, এ পরিসংখ্যান তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এদিকে ফেব্রুয়ারিতে চীনের উৎপাদক পর্যায়ের মূল্য সূচক বছরওয়ারি হ্রাস পেয়েছে দশমিক ৪ শতাংশ। বাজারে দশমিক ৩ শতাংশ পতনের প্রত্যাশা করা হচ্ছিল।

আইএনজির বৃহত্তম চীন-বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ আইরিস প্যাং বলেন, ফেব্রুয়ারিতে চীনের কারখানাগুলো কার্যক্রম প্রায় বন্ধই রেখেছিল। ফলে মূল্যপতন অনেকটাই প্রত্যাশিত ছিল। তিনি বলেন, তেলের বাজারের তীব্র অস্থিতিশীলতায় জ্বালানি মূল্য হ্রাস পাওয়ায় চলতি মাসেও উভয় মূল্যসূচকের পতন ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, জ্বালানি মূল্যের পতন সব কোম্পানির জন্য সুসংবাদ না-ও হতে পারে। কারণ অনেক কোম্পানিই উচ্চ মুনাফার জন্য তেলের উচ্চ মূল্যের ওপর নির্ভরশীল থাকে। তবে জনগণ কাজে ফিরে এলে এবং ব্যয় করতে আগ্রহী হলে উভয় পর্যায়ের মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছেন তিনি।

 

এদিকে ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ হো ওয়েই চ্যান জানান, ফেব্রুয়ারিতে চীনের খাদ্যবহির্ভূত সিপিআই তীব্রভাবে কমে দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যেখানে এর আগের মাসে খাদ্যবহির্ভূত সিপিআই ছিল ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এ পতন চীনের আরো দুর্বল চাহিদার প্রতিফলন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *