প্রাণ গ্রুপ আটা ময়দা সুজি আনছে
শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি বিশাল উঁচু সাইলো। যেগুলোতে গম প্রবেশ করে প্যাকেটজাত আটা হয়ে বেরিয়ে সরাসরি যাচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাকে। মাঝে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বেশ কয়েকটি ধাপ পার করে এসেছে আটা। এ প্রক্রিয়ায় নেই মানুষের কোনো সংস্পর্শ। পুরো কার্যক্রম অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। উৎপাদনের এ চিত্র গাজীপুর কালীগঞ্জের মুক্তারপুর ইউনিয়নে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের একটি কারখানার।
শনিবার (৯ নভেম্বর, ২০২৪)সরেজমিন গ্রুপটির শিল্প পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, আটা, ময়দা, সুজিসহ দু-তিনটি কারখানায় বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্য উৎপাদন শুরু করছে তারা। কয়েকটি কারখানার যন্ত্রপাতি বসানো প্রায় শেষের পথে। কয়েকটি কারখানা নির্মাণাধীন। ১৮০ বিঘা জমিতে এ শিল্প পার্ক গড়ে তুলেছে প্রাণ।
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেন, এখানে দৈনিক ৫০০ টন আটা, ময়দা ও সুজি উৎপাদন হচ্ছে। ভোজ্যতেল, লবণ, ডাল, স্টার্চ, পোলট্রি ফিড, মসলা, বেভারেজ, নুডলস, বিস্কুট, কনফেকশনারি, ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিংসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের জন্য ১৫শ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৭১৫ কোটি টাকা। প্রায় ২১ বিঘা জমিতে অটোমেটেড ফ্লাওয়ার মিলের কার্যক্রম শুরু করেছে প্রাণ। কারখানার সব যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি ইউরোপ থেকে আনা হয়েছে।
প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, দেশে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। এর বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে আটা-ময়দা। তাই এ খাতে বিনিয়োগে এসেছে প্রাণ। তাদের বিশ্বাস, ভোগ্যপণ্যের বাজারে নতুন উদ্যোক্তা এলে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। ফলে ভোক্তা লাভবান হবে।
তিনি বলেন, শুধু ফ্লাওয়ার মিলের মেশিনারি ও অন্যান্য বিল্ডিং নির্মাণে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। শিগগিরই উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ করা হবে। এ ছাড়া এ শিল্পপার্কে ফিডমিল চালু রয়েছে, যা প্রোটিন খাতে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি সিড ক্র্যাশিং, ভোজ্যতেল, লবণসহ বেশ কয়েকটি পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ভোক্তারা প্রাণের বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য দেখতে পাবেন।
ভালো প্রোটিন পেতে রাশিয়া, ইউক্রেনের পাশাপাশি কানাডা ও আমেরিকা থেকে গম আমদানি করা হচ্ছে বলে জানান প্রাণ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক নাসের আহমেদ। তিনি বলেন, আমদানির পাশাপাশি ভালো প্রোটিনযুক্ত গম ও অন্য ফসল উৎপাদন করতে প্রাণ ইতোমধ্যে ৬০০ একর জমি লিজ নিয়েছে।
উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে, পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে কয়েকটি ধাপে আটা, ময়দা ও সুজি তৈরি হচ্ছে। আমদানি করা গম মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারের মাধ্যমে সরাসরি সাইলোতে নেওয়া হয়। কাঁচামাল রাখার জন্য কারখানায় প্রতিটি ১০ হাজার টন সক্ষমতার ৬টি এবং এক হাজার টন সক্ষমতার তিনটি সাইলো রয়েছে। আরও ছয়টি সাইলো বসানো হবে। গমের পুষ্টি পরিমাণের জন্য কারখানায় রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাব। প্রাণ গ্রুপ জানিয়েছে, শিল্পপার্কটিতে প্রায় ৯০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। উৎপাদন পুরোদমে শুরু হলে তিন হাজার লোকের কাজের সুযোগ হবে।