পেঁয়াজের কেজি ২৫ টাকায় উঠেছে
চলতি মাসের শুরু থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দামে চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। দফায় দফায় বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৬-২৮ টাকায় উঠেছিল। তবে বাড়তি আমদানির কারণে মাঝে এক দফা পেঁয়াজের দাম কমেছে। এখন ফের বাড়তে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। বর্তমানে হিলির পাইকারি বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ২৫ টাকায় উঠেছে। গত দুদিনেই পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা।
গতকাল হিলিতে পেঁয়াজের আড়তগুলো ঘুরে ভারতের নাসিক ও ইন্দোর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বেশি বিক্রি হতে দেখা যায়। বাজারে ভারতের রাজস্থান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদাও বাড়তির দিকে ছিল। দুদিন আগেও পাইকারি পর্যায়ে (ট্রাক সেল) ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ১৮-২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গতকাল এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি মানভেদে ২১-২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। সে হিসাবে দুদিনের ব্যবধানে হিলির পাইকারি বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম মানভেদে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়েছে।
এদিকে পাইকারি পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে হিলির খুচরা বাজারেও। গতকাল বাংলা হিলি বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ টাকার উপরে। আর একই সময়ে দেশে উৎপাদিত প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানির ওপর থেকে বিদ্যমান ১০ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা স্কিম তুলে নিয়েছে। এর জের ধরে দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে দেশীয় আমদানিকারকদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। গত মাসের শেষের দিকে এবং চলতি মাসের শুরুতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে এটি বড় একটি কারণ ছিল।
তিনি আরো বলেন, চলতি মাসে দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। ভারতেও বৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি করতে চান না। পথিমধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। আমদানিকারকদের লোকসান হয়। এটাও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ। তবে আসন্ন কোরবানি ঈদে দেশের বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যাবে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশীয় আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়ে দিলে হিলির পাইকারি বাজারে মাঝে এক দফা পণ্যটির দাম কমে এসেছিল।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন ১৫-২০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়। বর্তমানে এর পরিমাণ ৪৫-৫০ ট্রাকে উন্নীত হয়েছে। মূলত কোরবানি ঈদের আগে বাড়তি চাহিদার বিষয়টি সামাল দিতে আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়েছেন।
এর পরও কেন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে? এ প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রেখেছে ভারতে পণ্যটির দাম। সম্প্রতি ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২ রুপি বেড়ে গেছে। ফলে আগের তুলনায় বাড়তি দামে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির কারণে পণ্যটির আমদানি ব্যয়ও আগের তুলনায় বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লোকসানের ঝুঁকিও। এসব কারণে দেশের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩-৫ টাকা বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবং আমদানিতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা না এলে কোরবানি ঈদের আগে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বর্তমানের তুলনায় কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।