পুকুরে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে

স্টাফ রিপোর্টার

জ্বালানি সংকটের এই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। জলাশয়ের ওপর স্থাপিত সোলার প্যানেল থেকে সূর্যের আলোর সাহায্যে উৎপাদিত হচ্ছে বিদ্যুৎ। এ বেসরকারি প্রকল্পটিতে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হচ্ছে কয়েক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

পরিবেশ ও কৃষিজমি নষ্ট না করে তুলনামূলক কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার ব্যাপকহারে বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আতাহার এলকার বুলনপুরে অবস্থিত নবাব অটোরাইস মিল। এই মিলের ভিতরে আছে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৫২টি পুকুর। এরমধ্যে দুটি পুকুরে পরীক্ষামূলকভাবে সম্প্রতি নিজস্ব অর্থায়নে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেন জুলস পাওয়ার লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটি দৈনিক ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। রাইস মিলটির বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে গড়ে দৈনিক ২ দশমিক ০৩ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে দশমিক ৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৫০০ সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। এসব প্যানেল বাসানো হয়েছে নবাব অটো রাইস মিলের ভিতরে থাকা দুটি পুকুরে। এছাড়াও কিছু সোলার প্যানেল অটোরাইস মিলের ছাদেও স্থাপন করা হয়েছে।

গত সোমবার (২৯ মে) এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে।

জুলস পাওয়ার লিমিটেডের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মোহাম্মদ নাহিদুজ্জামান বলেন, ওপেক্স মডেলের আওতায় অনগ্রিড এই সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনও শুরু হয়েছে। বর্তমানে এখান থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ১০ পয়সা দরে কিনছেন নবাব অটোরাইস মিল কর্তৃপক্ষ। কদিন আগেও এই মিল মালিক বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি নেসকোর কাছ থেকে ১০ টাকা ৬০ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কিনছিলেন। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য তার আড়াই টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিমাসে উৎপাদিত বিদ্যুতের ইউনিট হিসেবে বিল পরিশোধ করবেন মিল মালিক। এভাবে ১২ বছর ধরে বিল পরিশোধের পর পুরো কেন্দ্রটি বিনামূল্যে ওই ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর তিনি এই কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সামান্য কিছু রক্ষণাবেক্ষণের খরচ লাগতে পারে।

পানিতে সৌর প্যানেল ভাসানোর জন্য ফুডগ্রেডের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে পানি কিংবা মাছের কোনো ক্ষতি হবে না। আগামী ২০ বছর এর গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকবে। পানিতে সৌর প্যানেলগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছে যেন মাছের স্বাভাবিক জীবনচক্রে ব্যাঘাত না ঘটে, জানালেন নাহিদুজ্জামান।

জানতে চাইলে নবাব অটো রাইস মিলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের পুকুরগুলোকে আরও ব্যবহারযোগ্য করার জন্য এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আমরা এখান থেকে কম দামে বিদ্যুৎ কিনতে পারছি, আগামি দিনেও এখান থেকে নিজের বিদ্যুতের চাহিদা নিজেরই উৎপাদন করে চাহিদা পূরণ করতে পারবো। এই প্যানেল স্থাপন করার ফলে মাছের কোন ক্ষতি হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।  এখানে ৫২ টা পুকুর আছে, সেজন্য পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র দুটি পুকুরেই এই সোলার প্যালেন নির্মাণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে অন্যান্য সব পুকুরে এই সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নেসকোর কর্মকর্তা অলিউল আজিম বলেন, নবাব অটো রাইস মিলে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এই উৎপাদিত বিদ্যুৎ নেট মিটারিং পদ্ধতিতে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। এর মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মানুষের প্রায় দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ-এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এ পরিকল্পনাটা যদি আরও বড় আকারে করা যায় তাহলে আরও বেশি উপকার পাবে এখানকার মানুষ।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুলনপুরে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ভাসমান সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রকল্পটির ফলে একই জলাশয় থেকে মিলবে মাছ এবং বিদ্যুৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *