পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের রিপোর্ট জমা হবে এক প্ল্যাটফর্মে
বাংলাদেশের দুই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকসহ নিবন্ধিত সব প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইতোমধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং দেশি-বিদেশি পরামর্শকের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কমিশনে নিবন্ধিত সব প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি একক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্ল্যাটফর্মের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিএসইসি-আরবিসিএ রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম’।
সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই -সিএসই) পাঠিয়েছে বিএসইসি। আদেশে ১৬টি নিয়ম উল্লেখ করে সেগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এটা উপযুক্ত বলে মনে করে যে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রিস্কবেজড ক্যাপিটাল অ্যাডিকিউসি) বিধিমালা, ২০১৯ এর অধীনে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার একটি একক সাধারণ অনলাইন যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম থাকবে।
তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর ধারা ২০এ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগে কমিশন ডিএসই, সিএসই এবং নিবন্ধিত সংস্থাগুলোকে উল্লিখিত নিয়মের অধীনে কমিশনে অনলাইনে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার একক সাধারণ প্ল্যাটফর্ম, যথা: ‘বিএসইসি-আরবিসিএ রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম’ ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে।
অনলাইন প্লাটফর্মের আদেশে ১৬টি নিয়মের কথা বলা হয়েছে। ডিএসই বিদ্যমান অনলাইন রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম বিএসইসি-আরবিসিএ রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং সিএসই কমিশনের পূর্বানুমতি অনুসারে বিএসইসি-আরবিসিএ রিপোর্টিং চালু না হওয়া পর্যন্ত প্ল্যাটফর্ম রক্ষণাবেক্ষণে বৈধ থাকবে। সেই সঙ্গে বিএসইসি-আরবিসিএ রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম সকল নিবন্ধিত সংস্থাগুলোর জন্য প্রতিবেদন জমার জন্য সাধারণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া, সকল নিবন্ধিত সংস্থাগুলো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কমিশনের কাছে নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় সব প্রতিবেদন জমা দেবে৷
এদিকে, প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নতির জন্য ডিএসই দায়ী থাকবে। তবে, শর্ত থাকবে যে ডিএসই প্ল্যাটফর্মের বড় উন্নয়ন বা উন্নতির জন্য কমিশনের অনুমোদন নেবে। সেই সঙ্গে সময়ে সময়ে কমিশন দ্বারা নির্ধারিত প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নতির জন্য সকল নিবন্ধিত সংস্থার কাছে ডিএসই ফি দাবি করার অধিকারী হবে, যা সমস্ত নিবন্ধিত সংস্থাগুলোকে এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এবং তা প্রতিটি আর্থিক বছরের জন্যও হতে পারে। কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফি’র সময়সূচি ডিএসই তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে এবং কমিশনকে জানিয়ে সকল নিবন্ধিত সংস্থাকে অবহিত করবে।
অপরদিকে, ডিএসই প্রতিটি নিবন্ধিত সংস্থার জন্য প্ল্যাটফর্মে সর্বাধিক দুটি ব্যবহারকারী আইডি দেবে। প্রতিটি নিবন্ধিত সংস্থাকে তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও সক্ষম রাখতে কমিশনের সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের ও ডিএসই-সিএসই’র সংশ্লিষ্ট বিভাগের সর্বোচ্চ তিনজন কর্মকর্তার জন্য প্ল্যাটফর্মে ‘নিয়ন্ত্রক ব্যবহারকারী আইডি’ সরবরাহ করবে। ডিএসইর ট্রেক হোল্ডারদের ‘নিয়ন্ত্রক ব্যবহারকারী আইডি’ ডিএসই নিয়ন্ত্রিত করবে এবং সিএসই ট্রেক হোল্ডারদের ‘নিয়ন্ত্রক ব্যবহারকারী আইডি’ সিএসই নিয়ন্ত্রিত করবে। ডিএসই প্ল্যাটফর্মের সকল ব্যবহারকারীর জন্য একটি ম্যানুয়াল দেবে।
এছাড়া, সমস্ত নিবন্ধিত সংস্থা একক বা যৌথভাবে রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্মে তাদের কর্মকর্তাদের সক্ষমতা উন্নয়নে কর্মসূচির ব্যবস্থা করতে পারে৷ প্ল্যাটফর্মটি বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় সমস্ত রিপোর্টিং এবং কমপ্লায়েন্স পরিপালন করতে ব্যবহার করা হবে। ডিএসই প্রতিটি আর্থিক বছর শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্ল্যাটফর্মের পর্যায়ক্রমিক সিস্টেম অডিট নিশ্চিত করবে এবং তার ১০ দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই সঙ্গে প্ল্যাটফর্মের একটি পরিদর্শন বা সিস্টেম অডিট পরিচালনা করার প্রয়োজন হলে কমিশন যেকোনো ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে যেকোনো সময় সিস্টেম অডিট পরিদর্শন বা পরিচালনা করার জন্য অনুমোদন দিতে পারে। ডিএসই এ বছরের ডিসেম্বর শেষের দিকে প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন সম্পন্ন করবে এবং ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিবন্ধিত সংস্থাগুলোর সমস্ত রিপোর্টিং কার্যকর করবে৷