পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘দেশ-বিদেশে বিনিয়োগ করা ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে আমরা বিদেশী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ: এনআরবি (প্রবাসী বাংলাদেশী) অ্যান্ড ইউএন পিসকিপার্স লিডিং দ্য ওয়ে’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশী (এনআরবি)।
অনুষ্ঠানে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই, তবে সমন্বয়ের অভাব আছে। অর্থ পাচারে জড়িতদের বিষয়ে বিক্ষিপ্তভাবে মামলা দায়ের না করে তাদের পরিবার ধরে ধরে সমন্বিত উপায়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে বিদেশের আদালতে মামলা মোকাবেলার জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হবে।’
অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ধন-সম্পদ আছে কোথায়, সে বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার জন্য প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান গভর্নর। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। দিনদুপুরে এমন চুরি পৃথিবীতে আর কোথাও হয়নি।’
বিশ্বের কোথাও বাংলাদেশের মতো ব্যাংক খাত থেকে ঋণের নামে অর্থ পাচারের মাধ্যমে এত বড় আকারে অর্থ লুটের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন ড. আহসান এইচ মনসুর। তবে মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে কিছু অনিয়ম হয়েছে, যা বাংলাদেশের তুলনায় খুবই নগণ্য বলেও জানান তিনি।
বর্তমানে বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, ‘গত ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। রফতানি আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। প্রশিক্ষিত কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স বছরে ৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।’
সম্প্রতি সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষে উঠে এসেছে দুবাই। এটাকে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে গভর্নর জানান, সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাই আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এ সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হারে কারসাজি করার চেষ্টা করছে।
আহসান এইচ মনসুর আরো বলেন, ‘কিছুদিন আগে একটি ব্যাংক একই দিনে ১২১ টাকায় ডলার কেনে, কিছুক্ষণ পর আবার ১২৭ টাকায় ডলার কিনেছে। হঠাৎ করে ৫-১০ টাকা বেড়ে যাওয়া পৃথিবীর কোনো দেশে হয় না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ডলারের দাম বাড়লেও ১০ পয়সা, ২০ পয়সা বাড়ে।’
সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, সাবেক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী ফোর্স কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য শীর্ষ ১০টি ব্যাংককে সম্মাননা দেয়া হয়। ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক।