পাইপলাইনের ৮০ শতাংশ পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু

গ্রাম বা শহরাঞ্চলে পাইপলাইনে সরবরাহকৃত পানির ৮০ শতাংশেই ই-কলাই ভাইরাস বা ডায়রিয়ার জীবাণু রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি বলছে, দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা পায়। কিন্তু এ পানির বেশিরভাগ অনিরাপদ। ৮০ শতাংশ পাইপলাইনের পানিতে জীবাণু আর নলকূপ ও গভীর নলকূপ থেকে উত্তোলিত পানির ৪১ শতাংশে এ জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। জীবণুর এ হার পল্লী অঞ্চলের পুকুরে ব্যাকটেরিয়া উপস্থিতির হারের প্রায় সমান।

বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডায়রিয়ার জীবাণু ছাড়াও এ পানিতে ১৩ শতাংশে আর্সেনিক। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেটে আর্সেনিকের প্রভাব বেশি। উপকূলের মানুষ সবচেয়ে বেশি নিরাপদ পানির ঝুঁকিতে। কারণ এ অঞ্চলের পানিতে লবণাক্ততার হার দ্রুত বাড়ছে।

প্রতিবেদনে জানা গেছে, জীবাণুযুক্ত পানির কারণে পেটের পীড়া, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছে উচ্চ থেকে নিম্নবিত্ত পর্যায়ের মানুষ। এর মধ্যে দারিদ্র্য পীড়িতরা উচ্চবিত্তের চেয়ে তিনগুণ বেশি পীড়ায় ভুগছে।

মূলত অপর্যাপ্ত পরিশোধন ও অনিয়মিত প্রবাহের কারণে বাংলাদেশের পানিতে ই. কোলির হার বাড়ছে। এছাড়া পানির সরবরাহ লাইনে ছিদ্রের কারণেও ঝুঁকি বাড়ছে। দেশের অধিকাংশ শিশুই ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুমৃত্যু ও অপুষ্টি ঠেকাতে পানি, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। পানি ও স্যানিটেশনের আলাদা উদ্যোগ নিলে শিশুদের কল্যাণ বাড়বে।

নাগরিকদের নিরাপদ ও কার্যকর পানি-স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করতে সরকারকে অর্থায়নের বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থার বিষয়ে বলা হয়েছে, দেশে স্যানিটেশন সুবিধা সবাই ঠিক মতো পায় না। একাধিক পরিবার একটি টয়লেট ব্যবহার করছে এমন সংখ্যা পাঁচ কোটি আট লাখ। এসব মানুষ বেশিরভাগই শহরাঞ্চলের বস্তিবাসী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সিরিন জোমা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদের। মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জর্জ জোসেফ।

প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, শহরাঞ্চলের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। পানি ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার ডেলটা প্ল্যান গ্রহণ করেছে। আগামী ১০০ বছরে পানি ব্যবস্থাপনায় কি কি করা হবে তার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সিরিন জোমা বলেন, বাংলাদেশ পানি সরবরাহে ব্যাপক উন্নতি করেছে। এখন সময় এসেছে নিরাপদ পানি সরবরাহে মনোযোগ দেয়া। পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার গুণগত মান খারাপ হওয়ায় অনেক সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ শিশু খর্বাকায় এবং তাদের শিক্ষার ধারণক্ষমতাও কম বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *