পাইকারিতে বাড়ছে এলাচের দাম
আমদানিনির্ভর বিলাসী মসলাপণ্য এলাচ। গুয়াতেমালা, ভারতসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান এলাচ উৎপাদনকারী দেশগুলোয় ফলন কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে এ পণ্যের। এছাড়া শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করা ও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এলাচের আমদানি আশানুরূপ হয়নি। এসব কারণে দেশে পণ্যটির দাম বেড়েছে। রোজার আগে সরবরাহ না বাড়লে পণ্যটির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ ৯ ফেব্রুয়ারি এলাচের শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আগে কেজিপ্রতি শুল্ক ছিল সাড়ে ৭ ডলার। বর্তমানে সেটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ ডলার, যার কারণে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এলাচের কেজিপ্রতি দাম ২০০ টাকার বেশি বেড়ে যায়। যদিও গত কয়েক দিনে দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে লেনদেন হচ্ছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না বাড়লে এলাচের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন ভোক্তা ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
কাস্টমসের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে এলাচ আমদানি হয়েছে ৫৯৬ দশমিক ৭১ টন। অর্থাৎ তিন মাসে গড়ে আমদানি হয়েছে ১৯৯ টন করে। যদিও ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার ৯৭৭ টন বা প্রতি মাসে গড়ে আমদানি হয়েছিল ৪১৪ দশমিক ৭৫ টন।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশে এলাচ উৎপাদন হয়। আবহাওয়াজনিত কারণে উৎপাদন কমলে সারা বিশ্বেই দাম বাড়াসহ সরবরাহ সংকট তৈরি হয়। খাবার তৈরিসহ ওষুধ শিল্পে এলাচের ব্যবহার থাকায় দাম বাড়লেও চাহিদা থাকে এলাচের। এ কারণে বিশ্ববাজারে বুকিং মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে দেশে আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি দামও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন মসলা ব্যবসায়ীরা।
বুকিং দর বাড়ার ফলে আমদানি কমে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ বলেন, ‘প্রধান উৎপাদনকারী দুটি দেশে ফলন কম হওয়ায় এলাচের বুকিং দর অনেক বেশি। বিশেষ করে গুয়াতেমালার সরবরাহকারীরা দীর্ঘদিন বুকিং প্রস্তাব বন্ধ রেখেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে দুবাই ফেয়ারে এলাচের অস্বাভাবিক বুকিং প্রস্তাবের ফলে আমদানি অনেক কমে গেছে। যার কারণে দেশের বাজারে এলাচের দাম বাড়ছে।’ এলাচের বাজার স্থিতিশীল হতে আগামী মৌসুমের বৈশ্বিক উৎপাদনের ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কায়ন মূল্যের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি দামে লেনদেন হওয়ায় কাস্টমস শুল্কমূল্য দ্বিগুণ করেছে। তবে বিশ্ববাজারে বুকিং মূল্য দেশীয় শুল্কায়ন মূল্যের দ্বিগুণের বেশি। ফলে দেশে বর্তমানে এক কেজি এলাচ আমদানিতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। যার কারণে দেশে আগেই আমদানি হওয়া এলাচ ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা করছেন। বর্তমানে আমদানি হলে বিদ্যমান বাজার থেকে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। এ কারণে মজুদ প্রবণতায় বাজার আরো বেশি অস্থিতিশীল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তারা।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়েও দেশে প্রতি কেজি এলাচের পাইকারি দাম ছিল ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। তবে পণ্যটির দাম বেড়ে এক পর্যায়ে ৪ হাজার ২০০ টাকায় উঠে যায়। পরে দাম ওঠানামার পর বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩৫০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে। বিশ্ববাজারে টনপ্রতি ৩০ থেকে সাড়ে ৩৩ হাজার ডলারের বুকিং মূল্যে এলাচ আমদানি হলে দেশের বাজারে পণ্যটির আমদানি সংকটসহ দাম আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
দেশে এলাচের বার্ষিক চাহিদা সাড়ে ৪-৫ হাজার টন। খাদ্যপণ্য ছাড়াও ওষুধ, কনজিউমার পণ্য উৎপাদনে এলাচের ব্যবহার হয়। বিশ্বের প্রধান প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলোয় এলাচের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এক বছর ধরে পণ্যটির রফতানি মূল্য কয়েক গুণ বেড়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে এলাচের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ অবস্থায় লেনদেন হচ্ছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও দেশে আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য আগের অবস্থায় স্থির থাকায় বড় ধরনের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল সরকার। এ কারণে এলাচ আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নিতে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দেশে দাম আরো বাড়লে শুল্কায়ন মূল্যও বৈশ্বিক দামের সঙ্গে সমন্বয় হবে বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।