পাইকারিতে আদার কেজি ২০০ টাকা, রসুনের ১৩০
বেশ কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে মসলা পণ্য পেঁয়াজ। এবার আদা ও রসুনের বাজারেও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পণ্য দুটির দাম। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং বৃদ্ধি ও দেশীয় বাজারে চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমদানি না হওয়ায় এ অবস্থা দেখা দিয়েছে।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষদিন পাইকারি বাজারটিতে প্রতি কেজি আমদানীকৃত চীনা আদা বিক্রি হয়েছে ১৯০-২০০ টাকা দরে, যা গত রোববার পর্যন্ত ১২০ টাকার নিচেই বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে মাত্র তিনদিনেই পাইকারি পর্যায়ে পণ্যটির দাম কেজিতে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একই সময়ে কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ইন্ডিয়ান কেরালা আদার দাম। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি কেরালা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা দামে, যা সপ্তাহের শুরুর দিকে ৮৫ টাকার নিচে বিক্রি হতো বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে এক সপ্তাহে কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মসলা পণ্য রসুনের দামও। সপ্তাহের শুরুর দিকে বাজারে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। দুদিন ধরে একই বাজারে চীন থেকে আমদানীকৃত রসুন ১২০-১২৫ টাকা ও দেশী রসুন ১১৫-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ, রসুন ও আদা আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তিন-চার মাস ধরে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে মসলা পণ্য আদা ও রসুনের দাম। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে আদা-রসুনের দাম ৮০-১২০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। কিন্তু আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বর্তমানে পাইকারিতেই প্রতি কেজি আদা ২০০ টাকা এবং রসুন ১২৫ টাকায় ঠেকেছে।
বাজার অস্থির হওয়ার কারণ হিসেবে কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী ও মেসার্স গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় কুমার পোদ্দার বলেন, কাঁচা মসলা পণ্যের (পেঁয়াজ, আদা ও রসুন) বাজার আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে দেশীয় পণ্যের মৌসুমের সময় বাজার নিম্নমুখী হয়। আর মৌসুমের শেষদিকে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
এদিকে কাঁচা মসলা পণ্যের পাশাপাশি আরো কয়েকটি মসলা পণ্যের দামও বেড়ে চলেছে কয়েক দিন ধরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকায় ঠেকেছে মসলা পণ্য এলাচের দাম। স্বাভাবিক সময়ে বাজারে এলাচের লেনদেন হয়ে থাকে কেজিপ্রতি ৮০০-১২০০ টাকা। গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বেড়ে পণ্যটির বাজার বর্তমানে এ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
![চীনে রসুন রফতানি দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে](https://www.business24bd.com/wp-content/uploads/2019/01/Garlic.jpg)
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গতকাল বাজারে গুয়াতেমালা থেকে আমদানীকৃত জিবিসি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং এলএমজি ব্র্যান্ডের এলাচ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৪৮০ টাকার মধ্যে। এছাড়া ভালো মানের প্রতি কেজি এলাচ ৩ হাজার টাকা দামেও বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন হামিদুল্লাহ মার্কেট কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিচ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েক মাস ধরে আদা ও রসুনের দাম ঊর্ধ্বমুখী। মৌসুম শেষ হওয়ায় এ সময়ে দেশীয় আদা-রসুন নেই বললেই চলে। ফলে আমদানিকারকদের ওপর নির্ভর করছে এসব পণ্যের বাজার। মূলত আমদানীকৃত পণ্যের ওপর নির্ভরতার কারণে যখন-তখন বাজার অস্থির হওয়ার সুযোগ তৈরি হয় বলে মনে করছেন প্রবীণ এ ব্যবসায়ী।
অন্য মসলা পণ্যের মধ্যে গত কয়েক দিনে মরিচ ও হলুদের দামও বেড়েছে অতিরিক্ত। পাইকারি পর্যায়ে গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে ৫০-৮০ টাকা পর্যন্ত। একই সময়ে হলুদের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে ভারতীয় মিষ্টি জাতের মরিচ প্রতি কেজি ২০০-২১০ টাকা এবং ঝাল জাতের মরিচ ২৫০-২৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও বাজারে ভারতীয় মিষ্টি জাতের মরিচ ১৫০-১৬০ টাকা এবং ঝাল জাতের মরিচ ১৬০-১৭০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশী পঞ্চগড় এলাকার মরিচ ১৬৫ টাকা, রায়পুর এলাকার ১৬০-১৭৫ টাকা এবং হাটহাজারী অঞ্চলের ২১৫-২৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল বাজারে প্রতি কেজি দেশী হলুদ বিক্রি হয়েছে ১১০-১১৫ টাকা এবং ভারতীয় হলুদ বিক্রি হয়েছে ৯৮-১০০ টাকা দামে। গত সপ্তাহে বাজারে হলুদের দাম ছিল দেশী ১০০ টাকা ও ভারতীয় হলুদ ৯০ টাকা।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনসহ বেশির ভাগ মসলা পণ্যের দাম কয়েক মাস ধরে খুবই অস্বাভাবিক। দাম নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রশাসন যা করছে তা যথেষ্ট নয়। কারণ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাজে কোনো সমন্বয় নেই। এভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবও নয়।