পদ্মা সেতু কেবল যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য নয়, এই সেতুকে ইকোনোমিক করিডর করতে হবে : সেমিনারে বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার

পদ্মা সেতু কেবল যাত্রী পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহার করলে চলবে না। এটা আমাদের জাতীয় আকঙ্খার প্রতীক। এই সেতুকে ইকোনোমিক করিডর করতে হবে। একে কেন্দ্র করে ইকোনোমিক জোন শিল্প পার্ক গড়ে তুলতে পারলে সেটি জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ কর্মসংস্থান তৈরিতে অবদান রাখতে পারবে।

শনিবার (০২ জুন, ২০২২) রাজধানীর কারওয়ানবাজার সিএ ভবন অডিটোরিয়ামে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিতসামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিতবিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম মান্নান। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর বিশেষ ফেলো . মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক . আহসান এইচ মনসুর, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান . এম মাসরুর রিয়াজ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক . বিনায়ক সেন, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, গবেষণা সংস্থা ্যাপিড এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক . এম আবু ইউসুফ, আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ বোস, বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুারো চিফ এম শফিকুল আলম, ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমূখ আলোচনায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএবির সভাপতি মো. শাহাদাৎ হোসেন ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ন কবীর।

সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,পদ্মাসেতু জাতীয় আকঙ্খার প্রতীক। এটা শুধু পরিবহনের জন্য ব্যবহার করলে চলবে না, এটাকে ইকোনোমিক করিডর করতে হবে। পদ্মাসেতু ঘিরে ১৭টা ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। সেগুলো করতে হবে। তাহলে জাতীয় অর্থনীতি কর্মসংস্থানে অবদান রাখতে পারবে।

তিনি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক দূর্বলতা আমাদের উন্নয়নের বড় বাঁধা। যেমন এখনও এনবিআরের কর আদায়ে অনেক ঘাটতি আছে। মাথাপিছু আয় বাড়ছে কিন্তু রেভিনিউ জিডিপি কমছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে বিনিয়োগ করে উপযুক্ত করতে হবে। প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ দরকার, বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি আসবে না।

অনুষ্ঠানে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক . আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা যেমন জরুরি, তেমনি টাকার মান বাড়াতে হবে। যেমন রাশিয়াকে সাপোর্ট করে বলছি না, তবে একটা কথা বলছি দেশটি রুবলকে আকর্ষণীয় করেছে আমাদেরও এটা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দর্ঘদিন ধরে মার্কিন ডলারের দাম ৮২, ৮৩, ৮৪ এর মধ্যে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এটা কেন এমন হলো এর একটা কারণ আছে। কোভিডের সময় কোন সমস্যা হয়নি। এখন হঠাৎ করেই এটা সমস্যা হয়েছে এই সমস্যা নিরসন করে এক্সচেঞ্জ রেট ঠিক রাখতে হবে।

বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বাজেট জিপিডির মাত্র ১৪ শতাংশ। যেটা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। আবার আমাদের বাজেটের একটা বড় ব্যয় চলে যায় বেতন ভাতা দিতে।বাকি টাকা সরকারি উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হয়। বাজেট জিডিপির ২০ শতাংশ করলে ভালো।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রকল্প ভেবে চিন্তে নিতে হবে যাতে করে রিটার্ন ভালো আসে। আমরা জানি এবার রেলখাতে লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এই টাকা কবে রিটার্ন পাবো আমরা জানি না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম মান্নান বলেন, আমাদের ধীরে ধীরে কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া থেকে সরে আসা উচিত। কারণ গ্রামের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামে বাড়ি ঘরের রুপ পরিবর্তন হয়েছে, ছেলে মেয়ে পড়াশুনা করছে। সবাই ভালো আছে। কিন্তু বৈশ্বিকভাবে সারের দাম বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, আবার ভীতিও আছে শ্রীলঙ্কা ভীতি। কারণ কৃষি ভর্তুকি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয়। শ্রীলঙ্কাও অর্গানিক কৃষিতে গেছিলো তারা ফেল করেছে। তাই কৃষিকে সব সময় আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

অপচয়রোধ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম মান্নান বলেন, আমরা অপচয় রোধ করতে কাজ করছি।  মাঝে মাঝে আয়েশি ভাব করেছিলাম। এটার রাশ টানতে হবে। ১৮ প্রকল্পের তালিকা আছে। এগুলোর গুরুত্ব অনুসারে সাজানো হবে। কোনটা আগে প্রয়োজন কোনটা পরে প্রয়োজন সেটা বের করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

বিআইডিএস  মহাপরিচালক . বিনায়ক সেন বলেন, আমরা কেন শ্রীলঙ্কা হবো? আমাদের অর্থনীতির যে চারটি ড্রাইভার আছে তা ঠিক আছে। আমাদের কৃষি খাত ভালো আছে। এছাড়া রপ্তানি আয় ভালো।  চলতি বছরের মার্চ পযর্ন্ত রপ্তানি আয় ছিল ৪৪ শতাংশ।  এছাড়া ননএক্সপোর্ট ম্যানুফ্যাক্চারিং ভালো। বর্তমানে ভারত পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। তবে রেমিটেন্স কিছুটা কমেছে। চারটা ড্রাইভারের মধ্যে তিনটাই ভালো।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমি কোন চাপ দেখছি না। তবে হঠাৎ করে আমদানি ৬০ শতাংশ হয়েছিল। এটার কারণ আছে দীর্ঘদিন কোভিড ছিল। কোভিডের পর মানুষ কেনাকাটা করেছে। এছাড়া অনেক শিল্প কারখানায় কাঁচামাল প্রয়োজন হয়। তবে বর্তমানে ৬০ শতাংশ থেকে আমদানি কমে ২৮ শতাংশ হচ্ছে।

এমসিসিআই  সভাপতি  মো. সাইফুল ইসলাম রেমিটেন্সের উপর যে পরিমাণ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছেসোট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *