নুসরাত হত্যা : ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে পিবিআই

মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও ফেনী আওয়ামী লীগের দুই নেতাসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে আগামীকালই (বুধবারই) আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে।

মঙ্গলবার সকালে ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। চার্জশিটে ১৬ জনের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে পিবিআই।

নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি জানাতে আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলায় ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলা, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ ১৬ জন জড়িত। অভিযুক্তরা সকলেই গ্রেফতার রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বলেন, অভিযুক্ত ১৬ জনের মধ্যে এজহার নামীয় ৮ জন। আর এজহারের বাইরে তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় আরও ৮জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হচ্ছে কাল।

তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারকৃতদের প্রত্যেককে একাধিকবার রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অভিযুক্ত এই ১৬ জনের মধ্যে ১২ জন ১৬৪ ধারায় নুসরাত হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগীতা ও জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

অভিযুক্ত ১৬ জন হচ্ছেন, এস এম সিরাজউদ্দোলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম(২০), মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের(২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), মোহাম্মদ শামীম (২০), রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।

পিবিআইয়ের কথা মতো আগামীকাল যদি এ মামলার চার্জশিট জমা দেয়া হয় তবে হত্যাকাণ্ডের দুই মাসের মধ্যেই এ চার্জশিট জমা দেয়া হচ্ছে।

নুজরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আলোচনায় আসা সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

অধ্যক্ষের নিপীড়নের ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলা পিবিআইয়ে হস্তান্তরের পর এখন পর্যন্ত মামলার এজহারভুক্ত আট আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে আটজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

অন্যদিকে থানায় নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়াসহ সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে করা সব ধরনের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পিবিআই। ব্যরিস্টার সৈয়দ সায়েদুলহক সুমন কর্তৃক গত ১৫ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন পিবিআই সদর দফতরের সিনিয়র এএসপি রিমা সুলতানা।

তিনি বলেন, তদন্ত শেষে গত রোববার সাইবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এরপর সোমবার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *