নীল উৎসব নাকি ব্ল্যাক ক্যাপসদের আনন্দযজ্ঞ

স্টাফ রিপোর্টার

৮৩-তে যখন ভারত প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল তখন এই দলের অনেকেরই জন্ম হয়নি। আবার ২০১১ সালে যখন জিতল তখন এই দলের অনেকেই খেলা শুরু করেনি। তাই দুই বিশ্বকাপে কিভাবে জিতেছে অনেকেরই ভেতরে নেই। আমাদের যেটা কাজ, নিজেরা কিভাবে বিশ্বকাপ জিততে পারি সেটা নিয়েই ভাবছি। সেটা করেই নয় ম্যাচ জিতেছি। সামনে দুটি নক আউট ম্যাচ। কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। কোনো চাপ নেই। যেভাবে খেলে এসেছি ঠিক সেভাবেই জিততে চাই।’

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কথা গুলো বলছিলেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কপিল দেব ও মাহেন্দ্র সিং ধোনির পাশে বসতে তার প্রয়োজন কেবল দুই জয়। সেমি-ফাইনাল জয়ের পর ফাইনালে জিততে পারলে ভারত জিতে নেবে তৃতীয় বিশ্বকাপ। ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে লেখা হয়ে যাবে রোহিতের নাম।

সেই পরীক্ষায় তাদের প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড। ওয়াংখেড়েতে দুই দল মাঠে নামছে ফাইনালের টিকিট পেতে। সেমি-ফাইনাল নিয়ে ভারতীয় শিবির যেমন ফুরফুরে। কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের মধ্যেও নেই তেমন কোনো চাপ। নিয়মিত আইসিসি ইভেন্টে নক আউট পর্বের ম্যাচ খেলায় জানেন, কোথায়, কখন কী করতে হবে। উইলিয়ামসন বলেছেন, ‘ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপে ভারতেরই বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ সবাই পায় না। এ কারণেই এটা (ম্যাচ) বিশেষ কিছু এবং আমরা ভালো ফলই আশা করছি।’

ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত শিরোপার স্বাদ পায়নি ব্ল্যাক ক্যাপসরা। কিন্তু গত পাঁচ বিশ্বকাপে ফিরে তাকালে, সবচেয়ে ধারাবাহিক দল তারাই। এবার নিয়ে টানা পাঁচ বিশ্বকাপে তারা খেলছে সেমি-ফাইনালে। শেষ দুই বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেও শিরোপায় চুমু খাওয়া হয়নি। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সুপার ওভারে ম্যাচ হেরে যায়। শেষ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে ফাইনাল খেলেছিল নিউ জিল্যান্ড। এবারও দলকে শিরোপার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে চান উইলিয়ামসন। এই ম্যাচকে ঘিরে তার প্রত্যাশা কেবলই জয়। এজন্য মাঠে ভালো ক্রিকেট খেলার কথা বললেন, ‘দল হিসেবে আমাদের জন্য ব্যাপারটি হলো মনোযোগ মাঠের ক্রিকেটে রাখা। আমরাও বেশ ভালো ক্রিকেট খেলে আসছি। কিছু ম্যাচে খুব কাছে গিয়ে হেরেছি, কিছু জিতেছি, যে পথ ধরে আজকে আমরা এখানে। সামনের চ্যালেঞ্জ নিয়েও আমরা রোমাঞ্চিত।’

২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর আইসিসির কোনো ইভেন্টে শিরোপা নেই ভারতের। ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার পর ওয়ানডেতে তাদের চোকিং ব্যাপারটি চলে আসছে। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া–নিউ জিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সবকটি ম্যাচ জেতার পর সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় তারা। ২০১৯ সালে বাদ পড়ে নিউ জিল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনাল হেরে। টি-টোয়েন্টিতেও তাই। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনাল হার। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিতে হেরে যায় ইংল্যান্ডের কাছে। বারবার সেমিফাইনালে আটকে যাওয়ায় চোকিংয়ের ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। যদিও এসব নিয়ে রোহিতের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

‘এই যে আমরা সেমি-ফাইনালে উঠে বারবার হেরেছি, এটাই খেলাটার সৌন্দর্য। তারা অতীত নিয়ে অতটা ভাবে না। তারা বরং বর্তমানটাই মাথায় রাখে। আজ কী করল, কাল কী করবে, তাদের ভাবনা এই নিয়েই। আমি কাউকেই অতীত নিয়ে কথা বলতে দেখিনি বা শুনিনি। তাদের মনোযোগ ক্রিকেটার হিসেবে নিজেদের তারা কতটা এগিয়ে নিতে পারবে, তা নিয়েই। এটিই এই স্কোয়াডের খেলোয়াড়দের বৈশিষ্ট্য। এটা আমি মনে করি খুব ভালো একটা ব্যাপার।’ – বলেছেন রোহিত।

ভারতের গ্যালারি মানেই নীল সমুদ্র। গ্যালারিতে বিরাট, রোহিতের জার্সির ছড়াছড়ি। ২০১১ সালে সংস্কার হওয়ার পর ওয়াংখেড়ের আয়তন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩,১০৮ জন। উইলিয়ামসনের ধারণা গ্যালারিতে ভারতের সমর্থক আরো বেশি হবে। । এমন প্রতিকূল পরিবেশেও নিউজিল্যান্ড যে ভালো খেলার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।উইলিয়ামসন বললেন, ‘আমরা জানি, প্রচুর নীল সমর্থক (ভারতীয়) তাদের দলকে সমর্থন দেবে এবং সেটাও খুব আবেগের সঙ্গেই। কিন্তু একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমার কাছে এত বেশি সমর্থকের সামনে খেলার সুযোগ পাওয়াটা বিশেষ কিছু।’

মেরিন ড্রাইভে আজ নীল উৎসবে ভাসবে নাকি দুঃখে নীল হবে সেটাই দেখার। বিরাট কোহলি কিংবা রোহিত শর্মা ভারতের জার্সিতে তৃতীয় স্টার যুক্ত করার পথে একধাপ এগিয়ে যাবে কিনা অপেক্ষায়। কেন উইলিয়ামসনের আনন্দযজ্ঞ চলছে আইসিসি ইভেন্টে। এই আনন্দযজ্ঞের শেষটা শিরোপা রাঙাতে পারবেন তো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *