নির্বাচন করবেন না ড. কামাল

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শীর্ষ নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। ৫ বছর আগে যে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেছিল, সেই বিএনপি আজ কার্যত তার ওপর ভর করেই নির্বাচনে যাচ্ছে। অথচ তিনিই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। নির্বাচনী আয়োজনে অনুঘটকের কাজ করলেও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় জাতীয় এই নেতার সঙ্গে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাসায়ই থাকছেন গেল কয়েক দিন ধরে। তবে আগের থেকে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানান তিনি। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ড. কামালের বেইলি রোডের বাসায় গিয়েই বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না জানিয়ে  ড. কামাল বলেন, আমার নির্বাচনে অংশ নেয়া বড় কথা নয়। দেশে ভারসাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠা পাক। আমরা একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলে আসছি। নির্বাচনে কে হারলো, কে জিতলো সেটা বড় কথা নয়, দেশের মালিক জনগণ, তারা যেন নিজেদের পছন্দ মতো ভোট দিতে পারে সেটাই বড় কথা।

কী কারণে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না তা উল্লেখ না করলেও, বয়স এবং শারীরিক অসুস্থতার বিষয়েই ইঙ্গিত দেন ড. কামাল। যদিও আগেই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে জানিয়েছিলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপকভিত্তিক যে বিরোধী রাজনৈতিক জোট গঠন হয়েছে, তার শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি এটিকে রাজনৈতিক জোট উল্লেখ না করে বলেছিলেন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই একজোট হয়েছেন। যদিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বেই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ায় রাজনীতির চিত্রও বদলে গেছে।

ড. কামাল হোসেন ১৯৩৭ সালের ২০ এপ্রিল বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জুরিসপ্রুডেন্সে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৮ সালে ব্যাচেলর অব সিভিল ল’ ডিগ্রি লাভ করেন। লিংকনস ইনে বার-অ্যাট-ল’ অর্জনের পর আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে পিএইচডি করেন ১৯৬৪ সালে।

এই রাজনীতিক বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা হিসেবেই বেশি পরিচিত। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সবসময়ই সোচ্চার। ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পান। একই বছর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. কামাল হোসেন জাতিসংঘের স্পেশাল রিপোর্টারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়।

১৯৯১ সালে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা এবং ড. কামালের মধ্যে। ১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে তিনি গণফোরাম নামের রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে আসেন ড. কামাল হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *